ধূপগুড়ি হাসপাতালে শিশুমৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ পরিবারের

জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে পাঁচ মাসের এক শিশুর মৃত্যু ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বুধবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে, যার জেরে গোটা হাসপাতাল চত্বর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মৃত শিশুটির নাম দীপায়ন রায়, সে ধূপগুড়ি মহকুমার গারখুটা এলাকার বাসিন্দা।

ঘটনার সূত্রপাত
জানা গেছে, বুধবার সকালে জ্বর ও পেটের সমস্যা নিয়ে দীপায়নকে ধূপগুড়ি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বাবা-মা চন্দন রায় ও সুজাতা রায়। কিন্তু হাসপাতালে এসে তাঁরা জানতে পারেন, তখন কোনো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত নেই। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করার পর বেলা ১১টা নাগাদ একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শিশুটিকে পরীক্ষা করেন এবং দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।

অভিযোগের আঙুল চিকিৎসকদের দিকে
পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি করার পরপরই দীপায়নকে একে একে ৯টি ইনজেকশন দেওয়া হয়। এই ইনজেকশনগুলি নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুটির অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুপুর ১২টা নাগাদ শিশুটির মৃত্যুর খবর জানায়।

দীপায়নের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই তার বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মুহূর্তের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ধূপগুড়ি মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে, হাসপাতালের বারান্দায় ভিড় জমে যায়। পরিবারের তরফে স্পষ্ট অভিযোগ ওঠে, চিকিৎসায় গাফিলতি, তাড়াহুড়ো করে একাধিক ইনজেকশনের প্রয়োগ এবং সঠিক পর্যবেক্ষণের অভাবই দীপায়নের মৃত্যুর কারণ।

প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও জনরোষ
এই ঘটনার পর দ্রুত এলাকায় পৌঁছায় ধূপগুড়ি থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা তৎপর হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ধূপগুড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতালে দিনের শুরুতেই যদি শিশু চিকিৎসক না থাকেন, তাহলে জরুরি অবস্থায় রোগীরা কোথায় যাবেন?” মৃত শিশুর মা বলেন, “ওর জ্বর ছিল। পেট ফুলে ছিল। এখানে এসে অনেকক্ষণ বসেছিলাম। পরে ডাক্তার এল। তারপর ৯টা ইনজেকশন দিল।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও তদন্তের আশ্বাস
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। হাসপাতালের অ্যাকাউন্ট ম্যানেজারও গণমাধ্যমের সামনে কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এই ঘটনায় ধূপগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার মান এবং জরুরি অবস্থায় শিশু বিশেষজ্ঞের অনুপস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। পুরো ঘটনাটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা নাকি চিকিৎসায় সত্যিই কোনো গাফিলতি ছিল, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং পুলিশের তদন্তের পরই পরিষ্কার হবে।

Related Posts

© 2025 News - WordPress Theme by WPEnjoy