
রাজ্যে ওষুধ সংক্রান্ত জালিয়াতি নিয়ে বড়সড় চাঞ্চল্য। আমতা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রেসারের ওষুধের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ডিরেক্টরেট অফ ড্রাগ কন্ট্রোল। রাজ্যের এই রিপোর্ট সামনে আসতেই চমকে গিয়েছেন চিকিৎসক ও সাধারণ মানুষ। কারণ, পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছে, বাজারে চলতে থাকা ‘টেলমা এএম 40’ ওষুধটি আসলে সম্পূর্ণ জাল।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত এই ওষুধের জালিয়াতি ধরা পড়ার পরই সংশ্লিষ্ট প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওষুধের ব্যাচ নম্বর (05240367) হুবহু আসল ওষুধের মতোই রাখা হয়েছে, যাতে ক্রেতারা সহজে প্রতারণার শিকার হন। তবে ওষুধের গায়ে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলে দেখা যাচ্ছে, ‘Could not Verified’, অর্থাৎ সেটি নকল। এমনকি ওষুধের প্যাকেটের অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলেও বানান ভুল রয়েছে।
চক্র ভাঙতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন
এই ঘটনার পর রাজ্যের হাসপাতালগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। সমস্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ফার্মেসিগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ওষুধ গ্রহণের আগে কিউআর কোড স্ক্যান করে নিশ্চিত হতে হবে। কেবলমাত্র প্রমাণিত আসল ওষুধই রোগীদের দেওয়া যাবে। হোলসেল ও রিটেল বিক্রেতাদেরও সতর্ক করা হয়েছে, যাতে সাপ্লাই চেইনে থাকা এই ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা না করে বিক্রি না করা হয়।
আমতায় হানা, ১৭ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ উদ্ধার
২১ ফেব্রুয়ারি, হাওড়ার আমতায় মান্না এজেন্সি নামে এক ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার গোডাউনে হানা দেয় ড্রাগ কন্ট্রোল দফতর। সেখানে মজুত ছিল ১৭ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ। তদন্তে উঠে এসেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য—এই জাল ওষুধ বিহার থেকে আনা হয়েছিল এবং রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছিল।
এটাই প্রথম নয়! এর আগেও কলকাতায় ৬.৫ কোটি টাকার জাল জীবনদায়ী ওষুধ উদ্ধার হয়েছিল। তখনও সেন্ট্রাল ড্রাগ কন্ট্রোল সতর্কতা জারি করেছিল। জানা গেছে, প্রায় ৪৪ ধরনের নিম্নমানের ওষুধ দেশের বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে, যার উপাদানে ভেজাল মিশ্রিত।
কিউআর কোড জালিয়াতি: ওষুধ কোম্পানির অভিযোগের পর তদন্তে চাঞ্চল্য
২০২৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় ৩০০টি ওষুধের গুণমান বজায় রাখতে কিউআর কোড সংযুক্ত করার নির্দেশ দেয়। ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি সেই মোতাবেক ওষুধের গায়ে কিউআর কোড লাগায়। কিন্তু সম্প্রতি এক নামী ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা জানায়, তাদের প্রেসারের ওষুধের কিউআর কোড নকল করা হয়েছে।
এরপরই রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল তদন্তে নেমে নিশ্চিত হয়, আমতার মান্না এজেন্সি দীর্ঘদিন ধরে জাল ওষুধের ব্যবসা চালাচ্ছিল। অবশেষে, বৃহস্পতিবার সেই গোডাউনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সংস্থার মালিককে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তকারীদের অনুমান, এই চক্রের মাধ্যমে ১.৮৬ কোটি টাকার জাল ওষুধ বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে এই জালিয়াতির মূল চক্রীদের ধরতে তদন্ত চলছে।
রাজ্যে একের পর এক নকল ওষুধ উদ্ধারের ঘটনায় স্বাস্থ্য মহলে তীব্র উদ্বেগ ছড়িয়েছে। প্রশাসনের তরফে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তবে জনসাধারণেরও সতর্ক থাকা জরুরি।