
বিশ্বে বর্তমানে নয়টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে – আমেরিকা, রাশিয়া, ভারত, চীন, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইজরায়েল, উত্তর কোরিয়া এবং পাকিস্তান। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এমন অনেক পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে যা সম্পর্কে আজও কেউ জানে না এবং সেগুলি পৃথিবীর কোথাও হারিয়ে গেছে। এই নিখোঁজ বোমাগুলো বিশ্বজুড়ে এক অজানা আতঙ্ক তৈরি করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে পারমাণবিক বোমা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত ছিল, তখন অনেক পারমাণবিক বোমা বহনকারী বিমান আকাশে উড়ছিল। এক ইশারায় ধ্বংসযজ্ঞ নামানোর জন্য সেগুলো প্রস্তুত ছিল। এই সময়ে, নানা কারণে অনেক পারমাণবিক বোমা বিমান থেকে ফেলে দিতে হয়েছিল। কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা গেলেও, বহু অনুসন্ধানের পরেও বেশ কিছু বোমা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং সেগুলোকে নিখোঁজ ঘোষণা করা হয়েছিল।
একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩০ বার এমন ঘটনা ঘটেছে। যেখানে কোনো কারণবশত বিমান থেকে বোমা ফেলতে হয়েছিল, যা হয় হারিয়ে গেছে অথবা বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু কোনো দেশই এই ঘটনাগুলো স্বীকার করেনি, কারণ এর ফলে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারত।
এরকমই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৫৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন জর্জিয়ার তাইবি দ্বীপে একটি থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা ‘ব্রোকেন অ্যারো’ ফেলা হয়েছিল। বিভিন্ন মতানুযায়ী, বিমানের ওজন কমানোর জন্য বোমাটি দ্বীপটিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। পরে যখন বোমাটির খোঁজ শুরু হয়, তখন সেটি আর পাওয়া যায়নি। এমনকি জলের তলার তরঙ্গ পরিমাপক যন্ত্র এনেও সেটির খোঁজ মেলেনি।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছিল ১৯৬৫ সালে। ওই বছর একটি বি৪৩ থার্মোনিউক্লিয়ার বোমা জাপানের উপকূলে ফিলিপাইন সাগরে পড়ে গিয়েছিল। জানা গেছে, অসাবধানতাবশত বোমাটি সাগরে পড়ে যায়। এরপর আর সেটির খোঁজ মেলেনি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বোমাটির সঙ্গে আমেরিকার নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাও নিখোঁজ হয়েছিলেন, তাঁকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই নিখোঁজ পারমাণবিক বোমাগুলো পৃথিবীর নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। এগুলো যদি কোনো ভুল হাতে পড়ে বা অপ্রত্যাশিতভাবে বিস্ফোরিত হয়, তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। এই অজানা এবং অরক্ষিত পারমাণবিক অস্ত্রগুলো বিশ্বজুড়ে এক নিরন্তর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।