
দোলে রঙের উৎসবে মাতবে গোটা বাংলা। কিন্তু এই আনন্দের মাঝেই যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে কলকাতা পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করেছে। দোল ও হোলি উৎসব উপলক্ষে শহরজুড়ে প্রায় ২১,০০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তায় টহল দেবেন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার এবং ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। এছাড়াও শহরের ১০০টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিস্তারিত
দোল ও হোলি উৎসব উপলক্ষে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শহরজুড়ে ৫৮টি ভ্যান এবং বাইক টহল দেবে। এছাড়াও অলিগলিতে টহল দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ বাহিনীকে। লালবাজারকে প্রত্যেক মুহূর্তের আপডেট দিতে হবে স্থানীয় থানাগুলিকে। পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, গত দু’বছরে দোলের দিন কলকাতায় গঙ্গা এবং জলাশয়ে ডুবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।
গঙ্গা ও জলাশয়ে কড়া নজরদারি
দোলের দিন গঙ্গায় স্নান করতে নামা এবং জলকেলি করার চল রয়েছে। কিন্তু মদ্যপানের পর অনেকেই জলাশয়ে নামেন, যা থেকে দুর্ঘটনা ঘটে। এবার এই বিষয়ে কড়া নজরদারি রাখছে কলকাতা পুলিশ। শহরের ৬৬টি ঘাটে পুলিশের বিশেষ টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ৪৪টি ঘাটে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় ক্লাবগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে, যাতে মদ্যপান করে কেউ জলাশয়ে না নামেন।
মদ্যপান ও রাসায়নিক মেশানো রং নিয়ে সতর্কতা
দোলের দিন অনেকেই মদ্যপান করে উৎসবে মাতেন। এছাড়াও রংয়ে রাসায়নিক মেশানোর ঘটনাও ঘটে। এই বিষয়ে কড়া নজরদারি করবে পুলিশ। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, মদ্যপান করে কেউ যেন রাস্তায় বা জলাশয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ না করেন, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ টিম কাজ করবে। পুলিশের উপর হামলা বা বচসা করলে সরাসরি লকআপে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিশেষ নির্দেশ
এই বছর শুক্রবার হোলি উদযাপন এবং রমজানের দ্বিতীয় জুমার নামাজ একসঙ্গে হওয়ায় কলকাতা পুলিশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেছেন, “হোলি এবং শুক্রবারের নামাজ, দুটোই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। তাই, উভয় সম্প্রদায়েরই কাউকে অসম্মান না করে বা কারো অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে উদযাপন করা উচিত।” সাম্প্রদায়িকভাবে সংবেদনশীল এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পুলিশ স্টেশনগুলিকে নির্দিষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতি
কলকাতা পুলিশের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পাশাপাশি পুলিশের নজর থাকবে যাতে কেউ মদ্যপান করে জলাশয়ে না নামেন। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরে রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে বহু পুলিশকর্মী।
কলকাতা পুলিশের এই ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে যে, দোল ও হোলি উৎসব সবাই নিরাপদে এবং আনন্দের সাথে উদযাপন করতে পারবেন। উৎসবের আনন্দ যাতে কোনো দুর্ঘটনায় ম্লান না হয়, তা নিশ্চিত করতে কলকাতা পুলিশের এই পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার।