
দেশের ওষুধ শিল্পে গুণমানের প্রশ্নে নতুন করে বড়সড় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের (CDSCO) এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে, সারা দেশে ১৮৮টি ওষুধ গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি, যার মধ্যে রয়েছে বহু জীবনদায়ী ট্যাবলেট, ক্যাপসুল এবং ইনজেকশন। এই তালিকায় কলকাতার সেন্ট্রাল ড্রাগ ল্যাবরেটরিতে ব্যর্থ হওয়া ২৭টি ওষুধও রয়েছে, যা স্থানীয় স্তরেও পরিস্থিতিকে গুরুতর করে তুলছে।
ক্ষতিকারক উপাদান থেকে জাল ওষুধ: এক ভয়াবহ চিত্র
কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে বাজার থেকে সংগ্রহ করা ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, কিছু ইনজেকশনে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো, কিছু ওষুধ প্রস্তুত করা হয়েছে বিশুদ্ধ জল ব্যবহার না করেই। সবচেয়ে alarming বিষয় হলো, নামী ব্র্যান্ডের নাম নকল করে তৈরি করা হচ্ছে কিছু ‘জাল’ ওষুধ, যা সরাসরি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
রাজ্যজুড়ে বিস্তৃত জাল: উৎপাদকদের তালিকা
এই গুণমান বিচ্যুতি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয়। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও পাঞ্জাবের মতো ছয়টি রাজ্যের বহু সংস্থার ওষুধ এই গুণমান পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে হিমাচল প্রদেশের ৪৪টি, উত্তরাখণ্ডের ২৩টি, গুজরাতের ২৩টি, মহারাষ্ট্রের ১৬টি, মধ্যপ্রদেশের ১৩টি এবং পাঞ্জাবের ১২টি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা রয়েছে, যা সারা দেশব্যাপী এই সমস্যার গভীরতা তুলে ধরছে।
বাংলার মাটিতেও ভেজালের থাবা: ইউরিম্যাক্স-ডি নিয়ে চাঞ্চল্য
কেন্দ্রীয় স্তরের পাশাপাশি রাজ্যেও ভেজাল ওষুধের রমরমা ক্রমশ প্রকাশ পাচ্ছে। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলার সূত্রে খবর, হাওড়া থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষায় একটি বহুজাতিক ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় ওষুধ ‘ইউরিম্যাক্স-ডি’-এর ভেজাল সংস্করণ ধরা পড়েছে। প্রস্টেট ও কিডনির রোগীদের জন্য ব্যবহৃত এই ওষুধের নির্দিষ্ট ব্যাচটিকে ‘Not of Standard Quality’ (NSQ) হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থাৎ এগুলি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অযোগ্য। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা রুখতে কঠোর নজরদারি, কঠোর শাস্তির বিধান এবং ব্যাপক জনসচেতনতা এখন সময়ের দাবি। এই ভয়াবহ জাল ওষুধ-চক্র ভাঙতে কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া গতি নেই।
আগের ঘটনাগুলি কি শিক্ষা দেয়নি?
এর আগেও একাধিকবার রাজ্যে জাল ওষুধের কারবার ধরা পড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাওড়ার আমতায় মান্না এজেন্সি নামে একটি গুদাম থেকে প্রায় ১৭ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, যেখানে ধৃত সংস্থার কর্ণধার বাবলু মান্না বর্তমানে বিচারাধীন। মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নজরদারিতে উল্টোডাঙার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নকল অ্যালবুমিন ইনজেকশন উদ্ধার হয়েছিল। এমনকি, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভবানীপুরের একটি গোডাউন থেকে প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার জাল ওষুধ উদ্ধার হয়েছিল। এই বারবার ঘটে চলা ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, এই চক্রের শিকড় কতটা গভীরে প্রোথিত এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি কতটা মারাত্মক হুমকি।
দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ এখন অত্যাবশ্যক।