
বয়সের ভারে ন্যুব্জ, লাঠির উপর ভরসা করে চলাফেরা করেন ৮০ পেরোনো রোহিণী পাখুরিয়া। কিন্তু জীবনের কঠিন বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তার নতুন এক লড়াই। দুই দৃষ্টিহীন ছেলেকে নিয়ে গঙ্গাসাগরের খান সাহেব আবাদ এলাকার এক চিলতে কুঁড়েঘরে তার বসবাস। ঝড়-বৃষ্টি, গরম কিংবা শীত উপেক্ষা করে এই বৃদ্ধা তার দৃষ্টিহীন সন্তানদের মুখে দু’মুঠো অন্ন জোগাড়ের সংগ্রামে রত।
দারিদ্র্য আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে রোহিণীর এই লড়াই যেন নিত্যসঙ্গী। সাগরপাড়ের বাসিন্দা হওয়ায় প্রকৃতির রোষ, বিশেষত ঝড়-বৃষ্টি, তার জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করাও এখন এই বৃদ্ধার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।
রোহিণীর একমাত্র ভরসা সরকারি সাহায্য এবং কিছু সাধারণ মানুষের আর্থিক অনুদান। এই সামান্য সহযোগিতার উপর নির্ভর করেই চলে তাদের সংসার। জানা গেছে, রোহিণীর এক ছেলের বিশেষভাবে সক্ষমের (প্রতিবন্ধী) কার্ড থাকলেও, অন্য ছেলের এখনও আধার কার্ড হয়নি। আর আধার কার্ড না থাকায় সে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তবে বৃদ্ধা নিজেও কিছু পরিমাণ সরকারি ভাতা পান। রোহিণীর দুই সুস্থ-সবল বিবাহিত মেয়ে থাকলেও, তারা নিজেদের সংসারে ব্যস্ত। এখন তার দুই দৃষ্টিহীন ছেলেকে নিয়েই বাকি জীবনটা পার করছেন তিনি।
আশিতে পা রাখা রোহিণী পাখুরিয়া ইটিভি ভারতকে বলেন, “দুই দৃষ্টিহীন ছেলেকে নিয়ে কোনওরকমে সংসার চলছে। আমিও বয়সের কারণে তেমন চলাফেরা করতে পারি না। আমার দুই ছেলেই দৃষ্টিহীন। সরকারি ভাতার উপরে বেঁচে রয়েছি। সরকার যদি আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকায়, তাহলে আগামী দিনে বেঁচে থাকতে পারব। না-হলে সবকিছুই শেষ হয়ে যাবে!” তিনি আরও আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, “আমার দুই দৃষ্টিহীন ছেলের ভরসা একমাত্র আমিই। আমার বয়স হয়েছে। সরকার আমার ছেলে দু’টির কোনও ব্যবস্থা করে দিক। আমাদের পরিবারের পাশে যদি সরকার দাঁড়ায়, তাহলে আগামীতে দুই ছেলে ও আমি বাঁচতে পারব।”
এই বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। দ্রুত এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো হবে এবং সরকারি যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা যাতে ওই পরিবার পায়, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।