
প্রাথমিকে ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে ‘বেআইনি’ তকমা দেওয়ার পর এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে পর্ষদের তরফে দাবি করা হলো, দুর্নীতি এবং অনিয়ম এক জিনিস নয়, এবং সিঙ্গল বেঞ্চ তা বুঝতে ভুল করেছে। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি হয়।
মামলায় সওয়াল করতে গিয়ে পর্ষদের পক্ষে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত আদালতে বলেন, “অনিয়ম আর দুর্নীতি এক জিনিস নয়।” এজি’র সওয়াল ছিল, “দুর্নীতির কথা বলা হলেও কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি একক বেঞ্চ। দুর্নীতির চিরাচরিত সংজ্ঞাতে টাকা কে নিয়েছে তার প্রমাণ দিতে হয়। সিঙ্গল বেঞ্চ শুধু দুর্নীতির অভিযোগকে দুর্নীতি হয়েছে বলে ধরে নিয়েছে। দুর্নীতির কোনো প্রমাণ নেই।”
এজি আরও ইঙ্গিত দেন যে, সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি (প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়) নিজেই এক্ষেত্রে অনুসন্ধানের কাজ করেছেন। তিনি বলেন, “বিশাল সংখ্যক চাকরি প্রার্থীকে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে যে ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ তার থেকে বেশি ‘হাইপথিটিক্যাল’ বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে। সিলেকশন কমিটিতে অভিজ্ঞদের রাখা হয়। আদালত বান্ধবের পরামর্শ নিয়েছিল সিঙ্গল বেঞ্চ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অকৃতকার্যদের বিষয়ে সিঙ্গল বেঞ্চ যেন আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল এবং সেই পথেই রায় দিয়ে এগিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সিঙ্গেল বেঞ্চ নিজে এই মামলাকে জনস্বার্থ মামলার মতো দেখেছে। নিজেই অনুসন্ধান করেছে।”
এজি’র সওয়ালের জবাবে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “দুর্নীতি করে নিয়োগের যখন অভিযোগ উঠেছে, সেই সময়ে বিচারপতি কি শুধু চেম্বারে বসে নথি দেখে বিচার শেষ করতে পারেন? আপনি হলে কী করতেন?”
এজি নিজের সওয়ালে আরও বলেন, “সিঙ্গল বেঞ্চ কোনো সরকারি আধিকারিকের দুর্নীতিতে যুক্ত বা রাজনৈতিক প্রভাবের কথা ইন্টারভিউতে উল্লেখ করেনি। যদি ধরেও নেওয়া যায় অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট হয়নি, তাহলেও চাকরি বাতিল করা যায় না। কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, বিশাল সংখ্যক পরীক্ষার্থী যেখানে যুক্ত রয়েছে, সেখানে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হয় বিচার ব্যবস্থাকে। অথচ সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি এক ঘণ্টার নোটিসে জেলবন্দি প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতিকে এজলাসে হাজির করে জেরা করেছিলেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা কেউ ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন না।”
উল্লেখ্য, এই মামলার পর সুপার নিউমেরারি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ সরল না, এবং সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশই ডিভিশন বেঞ্চেও বহাল রইল।
২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলগুলিতে নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। মামলাটি কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে যায়। ২০২৩ সালের মে মাসে তিনি ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। এরপর সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হলেও সর্বোচ্চ আদালত তা ফের হাইকোর্টেই ফেরত পাঠায়। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হতে পারে।