দিল্লি যাত্রায় দিলীপ ঘোষ, বঙ্গ বিজেপিতে কি নতুন ইনিংসের সূচনা? জল্পনার পারদ তুঙ্গে

বঙ্গ বিজেপির রাজনীতিতে ফের জল্পনার পারদ চড়েছে। রাজ্য সভাপতি বদলের পর তাঁর ভূমিকা নিয়ে শুরু হওয়া সব अटकলকে যেন নতুন মাত্রা দিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। মঙ্গলবার নবনিযুক্ত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে সল্টলেকের বিজেপি কার্যালয়ে সাক্ষাতের পরদিনই দিলীপ ঘোষের দিল্লি যাত্রা, রাজনৈতিক মহলে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

কেন এই আকস্মিক দিল্লি সফর?
দিলীপ ঘোষের আকস্মিক দিল্লি সফর ঘিরে রাজ্য বিজেপিতে কানাঘুষো তুঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে— তাহলে কি বঙ্গ বিজেপিতে তাঁর গুরুত্ব আবারও বাড়তে চলেছে? নাকি কেন্দ্রীয় স্তরে তাঁকে নতুন কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে? যদিও রাজ্য বিজেপির নেতারা এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন, তবে সূত্র মারফত জানা গেছে, দিল্লি থেকে স্বয়ং দিলীপ ঘোষকে তলব করা হয়েছে। একই সঙ্গে এরাজ্যে বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসলকেও ডাকা হয়েছে। বুধবার সকালেই দু’জনেই দিল্লির পথে রওনা হয়েছেন এবং আজই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের দেখা করার কথা।

অনুপস্থিতি থেকে ফিরে আসা: এক নতুন সমীকরণ?
গত বেশ কিছুদিন ধরে বিজেপির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, এমনকি দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি চোখে পড়ছিল। শমীক ভট্টাচার্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্য সভাপতি ঘোষণার দিনও তিনি ছিলেন দুর্গাপুরে, যা তাঁর ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে জল্পনাকে আরও বাড়িয়েছিল। সে সময় প্রশ্ন উঠেছিল, দিলীপ ঘোষ কি বঙ্গ বিজেপিতে একেবারে ব্রাত্য হয়ে পড়লেন? শমীক ভট্টাচার্যকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে বারবার, যদিও তিনি প্রতিবারই জোর দিয়ে বলেছেন যে দিলীপ বিজেপিতে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। অন্যদিকে, দিলীপ ঘোষও সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে শমীক ভট্টাচার্যকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।

বিতর্কের মেঘ এবং জল্পনার অবসান?
সম্প্রতি দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে বিজেপির একাংশে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এর ফলেই দিলীপের সঙ্গে দলের একটি দূরত্বের সৃষ্টি হয় বলে মনে করা হচ্ছিল। তাঁর অনুপস্থিতি নতুন করে জল্পনার জন্ম দেয় – কেউ কেউ বলতে শুরু করেন দিলীপ ঘোষ হয়তো নতুন দল গড়বেন, আবার কারও কারও দাবি ছিল তিনি তৃণমূলে যোগ দেবেন।

তবে এই সব জল্পনাকে কার্যত মিথ্যে প্রমাণ করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সল্টলেকের বিজেপি দফতরে হাজির হন দিলীপ ঘোষ। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে তিনি আগেই জানিয়েছিলেন যে রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে সংবর্ধনা দিতে তিনি দফতরে যাবেন। তাঁর এই উপস্থিতিতে বিজেপি কার্যালয়ে বহু কর্মী-সমর্থকের ভিড় জমেছিল। তাঁদের সামনে দিলীপ ঘোষ আত্মবিশ্বাসের সাথে ঘোষণা করেন, “শমীক ভট্টাচার্যের হাত ধরেই নবান্নে পৌঁছবে বিজেপি।” পাশাপাশি, শমীককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আমি দলের একজন সাধারণ কর্মী এবং আপনার আদেশে লড়াই করতে রাজি আছি।” তিনি সবাইকে মিলে তৃণমূলকে হারানোরও ডাক দেন।

দিল্লি যাত্রার আগে দিলীপের বার্তা
মঙ্গলবার সন্ধ্যার ঐক্যের রেশ কাটতে না কাটতেই দিলীপ ঘোষের এই দিল্লি যাত্রা নতুন আলোচনা উসকে দিয়েছে। দিল্লি যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমার সেই বন্ধুরা খুব কষ্টে রয়েছেন, যাঁরা আমাকে তৃণমূল কংগ্রেসে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা একেবারে নতুন দল গঠন করে তার নাম দিয়ে আমার নাম করে চালিয়ে দিচ্ছেন। ওদের এখন গল্প তৈরি করতে করতে মাথা ব্যথা হয়ে গিয়েছে, ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন ওঁরা। কাল রাত থেকে আবার বৈঠক বসেছে কি ফান্ডা বের করা যায় এবার। আমি অপেক্ষা করছি, আপনারা অপেক্ষা করুন দেখুন কী হয়।”

দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যে একদিকে যেমন তাঁর সমালোচকদের প্রতি বিদ্রূপ ছিল, তেমনি তাঁর ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়েও একটা ধোঁয়াশা বজায় থাকল। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর বঙ্গ বিজেপির এই হেভিওয়েট নেতার নতুন ভূমিকা কী হতে চলেছে, সেদিকেই এখন সবার নজর।

Related Posts

© 2025 News - WordPress Theme by WPEnjoy