
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত দিঘার সমুদ্রতটে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা। এই নয়া আয়োজনের প্রাক্কালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিঘা সফর নিছকই এক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এর গভীরে লুকিয়ে আছে এক সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বার্তা, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে দিঘায় রথযাত্রা নিয়ে রাজ্যজুড়ে যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে, তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর এই উপস্থিতি নিঃসন্দেহে এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক আবেগঘন বার্তায় মুখ্যমন্ত্রী দিঘাকে ‘জগন্নাথ ধাম’ হিসেবে উল্লেখ করে এর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, “জগন্নাথ ধাম দিঘা এখন ভক্তদের আনন্দের উৎস। একইসঙ্গে এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে, এবং দিঘাকে একটি বারোমাসি পর্যটন ও তীর্থকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে।” দিঘাকে শুধুমাত্র একটি সৈকত শহর থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ তীর্থ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্নীত করার যে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা, মুখ্যমন্ত্রীর এই কথা তারই প্রতিফলন। প্রথমবারের মতো দিঘার উপকূলে রথযাত্রা আয়োজনের ভাবনা বাঙালির হৃদয়ে যে নতুন উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে, তার সদ্ব্যবহার করে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নই মূল লক্ষ্য।
নিজেই দিঘায় উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী রথযাত্রার সমস্ত প্রস্তুতি তদারকি করছেন। নিরাপত্তা, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি পরিষেবা – প্রতিটি দিক তিনি ব্যক্তিগতভাবে খতিয়ে দেখছেন। তাঁর কথায়, “এই উৎসব যাতে নির্বিঘ্ন, নিরাপদ এবং হৃদয়স্পর্শী হয়, তার জন্য রাজ্য প্রশাসন নিরলস পরিশ্রম করছে।” এটি স্পষ্ট যে, বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাগমের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসন সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তায় বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিও আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, “বাংলা হল শ্রীচৈতন্য, রামকৃষ্ণ পরমহংস, মা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দের ভূমি। সহানুভূতি, সম্প্রীতি আর সর্বজনীন ঐক্য আমাদের সংস্কৃতির মূলে।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় উৎসবের আড়ালে রাজ্যের অন্তর্নিহিত ধর্মনিরপেক্ষতা ও ঐক্যের বার্তাও তুলে ধরেছেন। জগন্নাথ দেবের আশীর্বাদে শান্তি, প্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে তিনি এক ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, অক্ষয় তৃতীয়ায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পর এবার দিঘা থেকেই রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করা মুখ্যমন্ত্রীর এক কৌশলগত পদক্ষেপ। রাজ্য সরকার অনুমান করছে যে, এই প্রথমবার রথযাত্রা উপলক্ষে দিঘায় প্রায় ২ লক্ষ ভক্তের সমাগম হতে পারে। এই বিপুল জনসমাগম দিঘার পর্যটন শিল্পে এক নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে এবং এটিকে রাজ্যের অন্যতম প্রধান তীর্থকেন্দ্রে পরিণত করার পথ প্রশস্ত করবে। দিঘার এই রথযাত্রা আগামী দিনে রাজ্যের পর্যটন এবং তীর্থক্ষেত্র হিসেবে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।