“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্বামীর খুন দেখছিল সোনম!”- মেঘালয় হানিমুন হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য

ভারতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত মেঘালয় রাজ্য সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের কারণে সংবাদ শিরোনামে এসেছে। বিয়ের মাত্র ১২ দিনের মাথায় হানিমুনে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া নবদম্পতি রাজা ও সোনম রঘুবংশীর রহস্যময় ঘটনাটি এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। মেঘালয়ের পাহাড়ের খাদে রাজার মৃতদেহ উদ্ধারের পর এই ঘটনা নতুন মোড় নেয়। অবশেষে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর থেকে গ্রেফতার করা হয় স্ত্রী সোনমকে, এবং খুলে যায় এক নৃশংস হানিমুন হত্যাকাণ্ডের জট।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, রাজার স্ত্রী সোনমই এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত। তাকে এই কাজে সাহায্য করেছে আরও চারজন: সোনমের প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা, বিশাল ওরফে ভিক্কি আনন্দ, আকাশ এবং আনন্দ। ক্রাইম ব্রাঞ্চের এসিপি পুনমচন্দ যাদব জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই জেরার মুখে নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে।

এসিপি যাদব আরও বলেন, “প্রথম আঘাত করেন বিশাল ওরফে ভিক্কি আনন্দ। ওরা চারজন ইন্দোর থেকে ট্রেনে চেপে গুয়াহাটি গিয়েছিল। বারবার ট্রেন বদল করে তারা মেঘালয়ে পৌঁছায়।”

তদন্তে সবথেকে চাঞ্চল্যকর যে তথ্য উঠে এসেছে, তা হলো—খুনের সময়ে সোনম ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিল। অভিযুক্তরা স্বীকার করেছে, সোনম তার স্বামীর খুন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিল। ইন্দোরেই রয়ে গিয়েছিল প্রেমিক রাজ কুশওয়াহা, তবে সে বিশাল, আকাশ এবং আনন্দকে মেঘালয়ে পৌঁছনোর জন্য ৪০-৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল। হত্যার পর রাজার দেহ একটি গাড়িতে তুলে পাহাড়ের খাদে ফেলে দেওয়া হয়।

ইন্দোর ক্রাইম ব্রাঞ্চ মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে এই খুনের তদন্ত চালাচ্ছে। এসিপি পুনমচন্দ যাদব জানিয়েছেন, “বিশাল খুনের সময় যে জামা পরেছিল, তা তার বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়েছে। সেটিকে ফরেনসিক টেস্টে পাঠানো হয়েছে। ওই রক্ত যে রাজারই, তা প্রমাণ করা আবশ্যক।”

আজ, বুধবার, রাজা রঘুবংশী হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সোনমসহ বাকি চার অভিযুক্তকে শিলং আদালতে তোলা হবে। আদালতে পেশ করার আগে সকলেরই মেডিক্যাল টেস্ট হবে এবং পুলিশ তাদের রিমান্ড চাইবে।

সূত্রের খবর, সোনমকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এসআইটি (SIT) এবং বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে শিলং পুলিশ। আলাদা আলাদা টিম প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলবে। এই টিমে একজন এসপি পদমর্যাদার অফিসার, একজন মহিলা অফিসার এবং অন্য সিনিয়র পুলিশ আধিকারিকরা রয়েছেন। তারা প্রত্যেকের বয়ান মিলিয়ে দেখবেন কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়ছে কি না। মেঘালয়ের ডিজিপি প্রতিদিন এই কেসের রিপোর্ট খতিয়ে দেখছেন এবং উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং চলছে।

পুলিশ উদ্ধার হওয়া প্রতিটি জিনিসের ফরেনসিক টেস্টের ব্যবস্থা করেছে। ক্রাইম সিনের পুনর্নির্মাণের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। জানা গেছে, শিলং পুলিশ সোনম এবং অন্যান্য সুপারি কিলারদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের পুনর্নির্মাণ করার পরিকল্পনা করছে। যেখানে যেখানে অভিযুক্তরা ছিল, সেখানেও তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

এই রহস্যময় হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে আর কী কী নতুন তথ্য উঠে আসে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy