“থ্রাস্ট পাচ্ছি না, নীচে পড়ছে, Mayday… Mayday..”-ভেঙে পড়ার আগে পাইলটের শেষ বার্তা কি ছিল?

আহমেদাবাদের মেঘানিনগরে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দেশের আকাশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার ঠিক আগে পাইলট সুমিত সবরওয়াল এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে পাঠিয়েছিলেন এক হৃদয়বিদারক বার্তা— “নো থ্রাস্ট, বিমান পড়ে যাচ্ছে, মেডে!” ইন্ডিয়া টুডে টিভি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে, যা দুর্ঘটনার পেছনের রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে।

দেশের অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (DGCA) জানিয়েছে, দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে বিমানটি রানওয়ে ছাড়ার পরপরই পাইলট এটিসি-কে এই জরুরি ‘মেডে কল’ করেন। এরপর এটিসি বারবার বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। পাইলটের এই শেষ মুহূর্তের বার্তাগুলি স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, উড্ডয়নের শুরুতেই বিমানটিতে গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল।

২৪২ থেকে ১: মর্মান্তিক পরিণতি
লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিমানে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী, ২ জন পাইলট এবং ১০ জন ক্রু মেম্বার। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ২৪১ জনেরই মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। অবিশ্বাস্যভাবে, মাত্র একজন যাত্রী— ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিক — বেঁচে গিয়েছেন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই অলৌকিক বেঁচে থাকা ব্যক্তিটিই সম্ভবত দুর্ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী।

ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার, তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্ঘটনার ২৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু। বিমানের লেজের কাছে থাকা কমলা রঙের এই ডিভাইসটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এটি ডিকোড করার কাজ চলছে। দুর্ঘটনার পর রবিবার থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার সমস্ত বোয়িং ড্রিমলাইনার বিমানের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা যাচাই (সেফটি চেক) শুরু হয়েছে।

রহস্যের জট: ২৭০ মৃত্যু, ৩ মাসের রিপোর্ট
আহমেদাবাদের এই বিমান দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে এখনও রয়েছে গভীর রহস্য। শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক জানিয়েছে, ৩ মাসের মধ্যে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭০ হয়েছে এবং সমস্ত দেহ আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে আনা হয়েছে।

অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু সাংবাদিক সম্মেলনে আরও জানান, আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। তিনি নিশ্চিত করেন যে, পাইলট জরুরি মেসেজ পাঠিয়েছিলেন কিন্তু এটিসি-র সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা যায়নি। মন্ত্রী বলেন, ‘এই ঘটনাটিকে মন্ত্রক গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (AAIB) তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য AAIB-র ডিজি তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যান।’

পাইলটের শেষ বার্তা এবং ব্ল্যাক বক্সের তথ্য – এই দুটির সমন্বয়েই হয়তো উন্মোচিত হবে আহমেদাবাদের আকাশ কালো করে দেওয়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পেছনের আসল কারণ। পুরো দেশ এখন সেই রিপোর্টের অপেক্ষায়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy