তুমুল আন্দোলনের আবহেই জন্মদিন পালন ট্রাম্পের, সেনা দিবসে প্রতিবাদে উত্তাল আমেরিকা

একদিকে মার্কিন সেনার ২৫০তম জন্মদিন, অন্যদিকে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিন — এই ‘ডাবল সেলিব্রেশন’ ঘিরে হোয়াইট হাউসে যখন সাজোসাজো রব, তখনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রাম্প-বিরোধী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে আমেরিকা। ট্রাম্পের প্রিয় ফানেল কেকের মিষ্টি স্বাদ যেন ফিকে হয়ে গেছে প্রতিবাদের তিক্ততায়।

শনিবার ওয়াশিংটনে সেনা কুচকাওয়াজে অংশ নেন ৬ হাজারেরও বেশি সেনা সদস্য। ১৭৭৫ সালের কনটিনেন্টাল আর্মি থেকে শুরু করে আধুনিক ইউনিফর্ম, নানা পোশাকে তারা রাস্তায় মার্চ করেন। আকাশে উড়তে দেখা যায় ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধবিমান, যা এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দেয়। শারম্যান ট্যাঙ্ক থেকে শুরু করে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রদর্শনীও ছিল নজরকাড়া। সেনার ‘গোল্ডেন নাইটস’ প্যারাশুট টিম লাল ধোঁয়ার রেখা ছেড়ে আকাশ থেকে নামতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন দর্শকরা।

ল্যারি স্ট্যালার্ড, ৮২ বছরের এক প্রাক্তন পাইলট, এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন এবং সংবাদমাধ্যমের কাছে ট্রাম্পকে ‘সর্বকালের সেরা প্রেসিডেন্ট’-দের মধ্যে একজন বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প নিজেও তার মাত্র আট মিনিটের বক্তৃতায় বলেন, “পৃথিবীতে সাহসিকতার দিক থেকে মার্কিন সেনার চেয়ে বড় আর কিছু নেই।” তিনি আফগানিস্তানের পাহাড় থেকে শুরু করে বাঙ্কার হিলের মতো ঐতিহাসিক স্থানে সেনার বীরত্বের কথা স্মরণ করেন।

প্রতিবাদের অন্য রূপ: ‘নো কিংস’ স্লোগান ও সংঘর্ষ:
কিন্তু এই উৎসবের মাঝেই দেশের নানা প্রান্তে দেখা গেল প্রতিবাদের ভিন্ন রূপ। ফ্লোরিডার টালাহাসির পুরনো কেপিটল বিল্ডিংয়ের সামনে ‘নো কিংস’ স্লোগানে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রায় ১,০০০ জন বিক্ষোভকারী জড়ো হন। তাদের স্লোগান ছিল স্পষ্ট: কোনো রাজা নয়, গণতন্ত্রই তাদের কাম্য।

লস অ্যাঞ্জেলেসে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কড়া অবস্থানের প্রতিবাদে আন্দোলন ঘিরে তীব্র অশান্তি তৈরি হয়। পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে ভিড় ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করতে হয়। বিক্ষোভকারী সামান্থা এজারটন অভিযোগ করেন, “আমরা শুধু শান্তিপূর্ণভাবে স্লোগান দিচ্ছিলাম, কিছু করিনি। তবু আমাদের উপর রাবার বুলেট চালানো হল।”

আটলান্টায় শতাধিক মানুষ ইন্টারস্টেট ২৮৫-এর দিকে যাচ্ছিলেন, যেখানে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের থামায়। ভার্জিনিয়ার কুলপেপারে বিক্ষোভ শেষে বাড়ি ফেরার সময় এক বিক্ষোভকারীকে ভিড়ের দিকে তেড়ে আসা একটি SUV ধাক্কা মারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

ট্রাম্পের জন্মদিনে তার অনুগামীরা যখন ফানেল কেক কেটে উল্লাস করছেন, তখন দেশের অন্য প্রান্তে এমন প্রতিবাদের দৃশ্য আমেরিকার রাজনৈতিক বিভাজনের গভীরতাকেই তুলে ধরে। অ্যারিজোনা থেকে আসা উইন্ড ইউলারের মতো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। তিনি বলেন, “আমার বাবা আইও জিমায় মেরিন ছিলেন, রিপাবলিকানও ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে এই ফ্যাসিবাদী কুচকাওয়াজ দেখে স্তব্ধ হয়ে যেতেন।”

এই ‘ডাবল সেলিব্রেশন’ এবং এর পাশাপাশি চলা বিক্ষোভগুলো যেন আমেরিকান সমাজের বর্তমান রাজনৈতিক দ্বিখণ্ডতার এক প্রতিচ্ছবি। আগামী দিনে এই মেরুকরণ আরও তীব্র হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy