
রাতভর অবিরাম ভারী বর্ষণের জেরে উত্তর সিকিমে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একাধিক স্থানে ধস নেমেছে, যার ফলে লাচেন, লাচুং, চুংথাং-সহ একাধিক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিস্তা নদী ধারণ করেছে এক রুদ্ররূপ, যার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিস্তা পাড়ে জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। মঙ্গন ও গ্যাংটক জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আজ সব পর্যটন পারমিট বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন পারমিট ইস্যু করাও আপাতত বন্ধ রয়েছে।
ধসের কারণে মুনসেথাং, লাচেন, লাচুং, নামচি, ফিডাং, টুং চেকপোস্ট, সাতমাইল, লেগশিপ ও কেওজিংয়ের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এর ফলে পর্যটকদের আটকে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। একটি তেলের ট্যাঙ্কার ধসের কবলে পড়ে উলটে গেলেও, সৌভাগ্যবশত চালক অক্ষত রয়েছেন। প্রবল বৃষ্টির কারণে ফিডাংয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মঙ্গনের জেলাশাসক সোনম ডেচু জানিয়েছেন, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, দমকল ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় উদ্ধারকাজ পুরোদমে চলছে। অন্যদিকে, কালিম্পংয়ের জেলাশাসক বালাসুব্রহ্মণ্যম টি নিশ্চিত করেছেন যে তিস্তার জলস্তর আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আশপাশের গ্রামবাসীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কন্ট্রোল রুম ও ত্রাণ শিবির চালু করা হয়েছে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক খবরটি হলো, বৃহস্পতিবার রাতে লাচেনচু নদীতে একটি পর্যটকবাহী গাড়ি পড়ে যায়। এই ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তিস্তার রুদ্ররূপ এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, যা নিখোঁজদের সন্ধানের কাজকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
সিকিম প্রশাসন পর্যটকদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার এবং আবহাওয়ার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত উত্তর সিকিমের দিকে যাত্রা না করার জন্য অনুরোধ করেছে। পর্যটন পারমিট বাতিল এবং সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এই মুহূর্তে সিকিমে ভ্রমণ পরিকল্পনা স্থগিত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
এই বিপর্যয় উত্তর সিকিমের জনজীবন ও পর্যটন শিল্পে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং উদ্ধারকারী দলের নিরলস প্রচেষ্টা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কতটা সফল হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।