
কুমোরটুলির পর এবার ঘোলা। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি অ্যাপ ক্যাব থেকে উদ্ধার হল আকাশি রঙের ট্রলি ব্যাগে ভরা একটি দেহ। মুখ, হাত-পা সেলোটেপ দিয়ে জড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেছে মৃতদেহটি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃতের নাম ভাগারাম সিং। তিনি রাজস্থানের পালির বাসিন্দা এবং বড়বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। এই খুনের ঘটনায় দুই অভিযুক্ত কৃষ্ণারাম সিং ও করণ সিংকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিনারা
দেহ উদ্ধারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মৃতের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে করণ সিং নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে কৃষ্ণারাম সিং নামে আরেক অভিযুক্তকে হাতেনাতে ধরা হয়েছিল। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গলার নলি কেটে শ্বাসরোধ করে ভাগারাম সিংকে খুন করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, খুনির কাছে ভাগারামের ৮ লক্ষ টাকা ধার ছিল। এই টাকা ফেরত না দেওয়ার জেরেই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গ্রেফতার দুই অভিযুক্তের পরিকল্পনা ছিল দেহটি জলে ভাসিয়ে রাজস্থানে পালিয়ে যাওয়ার।
দিনে খুন, রাতে দেহ ফেলতে এসেছিল
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ দমদম নাগেরবাজার থেকে দুই যুবক একটি অ্যাপ ক্যাব বুক করেন। ক্যাব চালকের বয়ান অনুযায়ী, অভিযুক্তরা একটি ট্রলি ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে গাড়িতে ওঠে। গাড়িটি নিমতা হয়ে মুড়াগাছা ব্রিজ পেরিয়ে ঘোলা মহিষপোতার কাছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে একটি অন্ধকার জায়গায় থামায় তারা। এরপর ট্রলি ব্যাগটি গাড়ি থেকে নামানোর সময় চালকের সন্দেহ হয়।
চালক প্রশ্ন করেন, “ট্রলি ব্যাগে কী আছে? এত ফাঁকা জায়গায় কেন নামতে চাইছেন?” এরপর অভিযুক্তদের সঙ্গে চালকের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। ঠিক সেই সময় ঘোলা থানার পুলিশের পেট্রোল ভ্যান এসে পড়ে। পুলিশ এগিয়ে এলে এক অভিযুক্ত পালিয়ে যায়, অন্যজনকে ধরে ফেলা হয়।
চালকের তৎপরতায় উদ্ধার
ক্যাব চালক জানান, “ওরা বলেছিল ট্রলি ব্যাগে কুর্তি আছে। আমি বললাম, কুর্তি এত ভারী হয় না। কিছুদিন আগে মধ্যমগ্রামে একটা ঘটনা ঘটেছিল, সেটা মাথায় ছিল। ওরা আমাকে ভাড়া দিয়ে দিয়েছিল। ড্রপ লোকেশন এখানকার দিয়েছিল, পিকআপ ছিল নাগেরবাজার থেকে। কিন্তু ট্রলি এত ভারী হওয়ায় আমার সন্দেহ হয়। পুলিশ এসে ব্যাগ খুলতেই দেহ দেখা যায়।”
অভিযুক্তের দাবি
গ্রেফতার হওয়া করণ সিং দাবি করেছেন, “কৃষ্ণারাম আমাকে ফোন করে বলেছিল, ফ্যাক্টরি থেকে বন্ধু আসবে, তার কাছ থেকে পার্সেল আনতে হবে। আমি সেই কথায় গিয়েছিলাম। ট্রলি খোলার পর দেখি দেহ রয়েছে। ব্যাগ আমার নয়, কৃষ্ণারামের।”
কুমোরটুলির পর ঘোলা
এর আগে কিছুদিন আগে কুমোরটুলিতে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছিল। মধ্যমগ্রামে পিসি শাশুড়িকে খুন করে ট্রলি ব্যাগে ভরে কুমোরটুলিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনা ব্যাপক শোরগোল ফেলেছিল। এবার ঘোলায় একই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই খুনের পিছনে আর্থিক লেনদেন ছাড়া অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।