
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জীবন হুমকির আশঙ্কায় বিধানসভা প্রাঙ্গনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতির দাবি জানিয়ে বিধানসভার প্রধান সচিবকে চিঠি লিখেছেন। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলির সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা থেকে তিনি ও বিরোধী বিধায়করা বিধানসভা প্রাঙ্গণে নিরাপদ বোধ করছেন না। এই পরিস্থিতিতে তিনি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
চিঠিতে কী বলা হয়েছে?
শুভেন্দু অধিকারী তাঁর চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা হরকাত-উল-জিহাদ-আল ইসলামি বাংলাদেশ (হুজি-বি) এবং হিজবুত-তাহরিরের মতো জঙ্গি সংগঠনের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। এই সংগঠন দুটি বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। চিঠিতে তিনি দাবি করেন, “বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রশাসনিক পরিবর্তনের পর এই সংগঠনগুলির শীর্ষ নেতারা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। কেন্দ্রীয় সংস্থা রাজ্য পুলিশকে আমার উপর সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।” তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানোর পর এক মাসের মধ্যেই এই হুমকির তথ্য পাওয়া গেছে।
জঙ্গি গ্রেফতারের প্রসঙ্গ
চিঠিতে শুভেন্দু উল্লেখ করেছেন, সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সন্দেহভাজন জঙ্গি জাভেদ মুন্সিকে গ্রেফতার করেছে। জাভেদ অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ও বিরোধী বিধায়করা বিধানসভা প্রাঙ্গণে নিজেদের অনিরাপদ মনে করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “বিধানসভা প্রাঙ্গণে আমাদের ব্যক্তিগত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা থাকছে না। আপনি (প্রধান সচিব) কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আশা করি, আপনি এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন।”
স্পিকারের প্রতি হুঁশিয়ারি
শুভেন্দু তাঁর চিঠিতে সতর্ক করে বলেছেন, “বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীন প্রাঙ্গণে যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, যা আমার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তবে তার জন্য স্পিকার ও বিধানসভা কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।” তিনি জোর দিয়ে দাবি করেছেন যে, তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিধানসভা প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি অপরিহার্য।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
শুভেন্দু অধিকারীর এই চিঠি প্রকাশ্যে আসার পর রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলনেতা হিসেবে তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্তরেও উঠে গেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চিঠির মাধ্যমে শুভেন্দু রাজ্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন।
পরবর্তী পদক্ষেপ
বিধানসভা কর্তৃপক্ষ এই চিঠির জবাবে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকে নজর রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি মেনে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে বিধানসভা প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নতুন প্রশ্ন তুলেছে।