
স্বাস্থ্য ভবনের কর্মী পরিচয়ে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) একটি শাখায় ১২ লক্ষ টাকা জালিয়াতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় সর্বশেষ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর মোট ধৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ। পুলিশের অনুমান, এর পেছনে একটি সুসংগঠিত চক্র সক্রিয় রয়েছে, যার জাল আরও গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত।
ঘটনার সূত্রপাত ও প্রাথমিক গ্রেফতারি:
গত কিছুদিন আগে এসবিআইয়ের স্বাস্থ্য ভবন শাখায় একটি ১২ লক্ষ টাকার ঋণ অনুমোদন হয়। দুই ব্যক্তি নিজেদের স্বাস্থ্য ভবনের কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে এবং জাল পরিচয়পত্র ও নথি ব্যবহার করে এই ঋণ গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নথিপত্রের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে জানতে পারে যে সেগুলি সম্পূর্ণ ভুয়ো। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ইলেকট্রনিক্স থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। প্রাথমিক তদন্তে নেমে পুলিশ মূল অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন-সহ আরও দুজনকে গ্রেফতার করে।
নবতম গ্রেফতারি ও তদন্তের মোড়:
শুক্রবার, ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার পুলিশ এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আরও দুই অভিযুক্ত, আলাউদ্দিন শেখ এবং মোহন মিদ্দাকে বাঁকুড়া থেকে গ্রেফতার করে। আজ তাদের বিধাননগর আদালতে পেশ করা হয় এবং পুলিশ হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানানো হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এই দুই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জাল নথি তৈরির উৎস এবং এই চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।
চক্রের বিস্তার ও ভবিষ্যৎ তদন্ত:
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এই জালিয়াতির পেছনে একটি বড়সড় চক্র সক্রিয়। কেবলমাত্র দুইজন ব্যক্তি নয়, আরও অনেকে এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্য ভবনের মতো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে কীভাবে এত নিখুঁত জাল নথি তৈরি করা সম্ভব হলো, সেই দিকটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন উৎস থেকে ভুয়ো কাগজপত্র সংগ্রহ করে অথবা তৈরি করে, যা ব্যাংক কর্মকর্তাদের পক্ষে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা কঠিন হয়।
ব্যাংকিং সুরক্ষার প্রশ্ন:
এই ঘটনা ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা এবং পরিচয়পত্র যাচাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। কীভাবে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় এত বড় অঙ্কের টাকা ভুয়ো পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে অনুমোদিত হলো, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নথিপত্র যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা উচিত।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দ্রুত এই চক্রের মূল পান্ডা এবং অন্যান্য সদস্যদের হদিশ বের করার চেষ্টা চলছে। এই জালিয়াতির পেছনে কোনো বৃহৎ নেটওয়ার্ক কাজ করছে কিনা, তাও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।