
জগন্নাথ দেবের প্রসাদ হিসেবে হিন্দুদের ‘হালাল মিষ্টি’ খাওয়ানো হচ্ছে—এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। শুক্রবার দুর্গাপুরে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ দিবস উপলক্ষে এক সভায় তিনি এই প্রসঙ্গ তুলে তীব্র আক্রমণ শানান।
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, “মুর্শিদাবাদের রানিনগরে এক অহিন্দুর দোকানে তৈরি হালাল মিষ্টিকে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বলে হিন্দুদের খাওয়ানো হচ্ছে। এটা কি গ্রহণযোগ্য? হিন্দুদের কি এই প্রসাদ খাওয়া উচিত?”
এই দাবি ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা একটি ভিডিয়োয় এক যুবক, যিনি নিজেকে সামসুরজ্জামান নামে পরিচয় দিচ্ছেন, জানিয়েছেন তিনি রানিনগরের ‘টিপটপ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’-এর মালিক। ভিডিয়োয় তিনি বলেন, “সরকারি বরাত এসেছে, মিষ্টি তৈরির কিছু উপকরণ দেওয়া হয়েছে। বিডিও সাহেব যেমন বলেছেন, তেমনভাবেই তৈরি করেছি। আমার দোকানে হালাল মিষ্টিই তৈরি হয়।” তিনি আরও জানান, প্রতিটি প্যাকেট তৈরিতে খরচ পড়ছে ১৫ টাকা।
এই প্রেক্ষিতে শুভেন্দুর কটাক্ষ, “সরকার কি হালাল মিষ্টিকে জগন্নাথের প্রসাদ বানিয়ে দিচ্ছে?” তাঁর অভিযোগ, হিন্দুদের আবেগকে আঘাত করতেই এই পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
প্রসঙ্গত, হিডকো (HIDCO)-র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দিঘার জগন্নাথ ধাম কালচারাল সেন্টারের মিষ্টি প্রসাদ গোটা রাজ্যে বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে। প্রতিটি প্যাকেটের মূল্য ধার্য করা হয়েছে ২০ টাকা। বিরোধী দলের অভিযোগ, এই প্রসাদ স্থানীয় কিছু নির্দিষ্ট দোকানেই তৈরি হচ্ছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে স্বচ্ছতা এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রকৃত সম্মান নিয়ে।
তবে সরকারি সূত্রে দাবি, এই মিষ্টি তৈরির জন্য আগেই পবিত্র খোয়া ক্ষীর জগন্নাথ ধামে পুজো দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্যের বিভিন্ন মিষ্টি প্রস্তুতকারীদের কাছে পাঠিয়ে সেই খোয়া মিশিয়ে প্রসাদ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন—যেখানে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আস্থার বিষয় জড়িত, সেখানে কোনওরকম ‘হালাল’ ট্যাগযুক্ত খাদ্যদ্রব্য জগন্নাথের প্রসাদ হতে পারে কি?
এই বিতর্কে এখনও রাজ্য সরকারের কোনও সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছে—ধর্মীয় প্রসাদ নিয়ে এমন বিতর্ক আদৌ সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে কি?