চোর সন্দেহে যুবককে আটক! অর্ধনগ্ন করে বনেটে বেঁধে শহর ঘোরাল পুলিশ, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড়

আইনের রক্ষকরাই যখন আইন হাতে তুলে নেন, তখন তা সমাজের জন্য এক বিপজ্জনক বার্তা বয়ে আনে। সম্প্রতি জম্মুতে এমনই এক হাড়হিম করা ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে চুরির অভিযোগে আটক এক যুবককে অর্ধনগ্ন করে, গলায় জুতোর মালা পরিয়ে পুলিশের গাড়ির বনেটের সঙ্গে বেঁধে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরানো হয়েছে। এই অমানবিক ও বেআইনি ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হতেই দেশজুড়ে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।

ঠিক কী ঘটেছিল?
ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার দুপুরে জম্মুর সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। জানা গেছে, কয়েকজন যুবক সেখানে চুরি করতে যায়, কিন্তু তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বাকিরা পালিয়ে গেলেও এক যুবককে কর্মীরা ধরে ফেলেন এবং খবর দেওয়া হয় পুলিশে। এরপরই পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বক্সিনগর থানার পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশকর্মীরা যুবকটিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় তার গায়ে থাকা জামা খুলে দেন। এরপর তার গলায় জুতোর মালা পরিয়ে তাকে পুলিশের গাড়ির বনেটে বসানো হয় এবং শহরের বিভিন্ন বাজার এলাকা ঘুরিয়ে তারপর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মেডিক্যাল কলেজের কর্মীরা আরও অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশকর্মীরা ওই যুবককে মারধরও করেছেন।

পুলিশ কর্তাদের নড়েচড়ে বসা: তদন্তের নির্দেশ, নিন্দায় জেনেভা কনভেনশন
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তারা নড়েচড়ে বসেছেন। জম্মুর প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনো অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বলার সময় জম্মুর ডিআইজি শিব কুমার জানান, অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “যুবকের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা শুধু অমানবিক নয়, বেআইনিও বটে। আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার পুলিশেরও নেই।”

ডিআইজি শিব কুমার আরও উল্লেখ করেন, ১৯৪৯ সালে হওয়া জেনেভা কনভেনশনে এ নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনা হয়েছিল, যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, কোনো মানুষকে এভাবে বেঁধে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা অপরাধ। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশের আইনে এই বিষয়টি যুক্ত হয়েছে।

আট বছর আগের স্মৃতি, আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি:
জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাসে এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৭ সালে ভারতীয় সেনা বাহিনীর এক মেজরও একই কাজ করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। সে সময় বুদগাম জেলায় অভিযানের সময় পাথর ছোড়ার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করে সেনা। তাকে স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আগে এভাবেই জিপের বনেটের সঙ্গে বেঁধে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ওই মেজরের মনে হয়েছিল যে, তাঁর জিপের সামনে যুবককে বেঁধে রাখলে অন্য কেউ পাথর ছুড়বে না। আট বছর বাদে আবারও একই ধরনের ঘটনা ঘটল জম্মুতে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

এই ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমেও ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার কর্মীরা অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy