
চিপসের প্যাকেট ‘চুরি’র মিথ্যা অপবাদে মানসিক চাপ সইতে না পেরে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার এক ১৩ বছর বয়সী কিশোর আত্মঘাতী হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় গ্রামে তীব্র উত্তেজনা ও শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে। চুরির অভিযোগ তুলেছিলেন দোকান মালিক তথা সিভিক ভলান্টিয়ার শুভঙ্কর দীক্ষিত। তবে এই অপবাদ গোটা গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়ার মূল অভিযুক্ত শ্যাম ভুঁইয়া নামে এক ব্যক্তি, যিনি এলাকায় ‘ঘর জামাই’ বলে পরিচিত। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কিশোরের উপর মানসিক চাপ তৈরিতে শ্যামের বড় ভূমিকা ছিল। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের হয়নি।
বৃহস্পতিবার রাতেই ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা অভিযুক্ত দোকান মালিক শুভঙ্কর দীক্ষিতের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এই ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। মৃত কিশোরের মা-বাবা থানায় অভিযোগ জানানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন, তবে শোকে দিশাহারা পরিবার। সকলের মুখে একটাই কথা, ‘ছেলেটা তো আর ফিরবে না।’
মৃত কিশোরের বাড়িতে এখনও দোকান থেকে নিয়ে আসা তিনটি চিপসের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখা গেছে। প্যাকেটগুলো খোলা তো দূর, দাঁত দিয়ে কাটারও কোনো চিহ্ন নেই, যা কিশোরের নির্দোষিতার বেদনাদায়ক প্রমাণ হিসেবে পরিবারের কাছে রয়ে গেছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই গোঁসাইবেড় গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রাণবন্ত এক পড়ুয়ার এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। অভিযুক্ত দোকান মালিকের বাড়িতে হামলার পর রাত থেকেই পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে। বর্তমানে শুভঙ্কর দীক্ষিত বাড়িতে নেই এবং তার বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুভঙ্করের স্ত্রীর দাবি, শ্যাম ভুঁইয়াই ওই কিশোরকে নিয়ে চুরির অপবাদ গোটা গ্রামে রটিয়েছিল, যার কারণেই মানসিক চাপ থেকে কিশোর এমন চরম সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত শ্যাম ভুঁইয়াও এলাকাছাড়া বলে খবর। ঘটনার পর থেকেই তাকে এলাকায় দেখা যায়নি। শ্যাম পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা হলেও, পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় গ্রামে ‘ঘর জামাই’ হিসেবে থাকেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, মত্ত অবস্থায় মাঝেমধ্যেই শ্যামকে এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। আরও অভিযোগ, ঘটনার দিন শ্যামই ওই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে অপমানজনক কথাবার্তা বলেন এবং কিশোর ও তার মাকে দোকানের সামনে নিয়ে আসেন।
রবিবার স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে গিয়েছিল সপ্তম শ্রেণির ওই পড়ুয়া। দোকানের সামনে কিছু চিপসের প্যাকেট ঝুলছিল এবং কয়েকটি প্যাকেট নীচে পড়ে যায়। ওই কিশোর চিপস কিনতে দোকানে গিয়েছিল। এর মাঝে দোকানদার দোকানের পিছনে কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফিরে এসে তিনি ওই কিশোরকে পড়ে থাকা তিনটি চিপসের প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখেন। দোকানদার পিছু ধাওয়া করলে কিশোর টাকাও দিয়ে দেয়। এরপরই চুরির অপবাদের বিষয়টি সামনে আসে। বাড়ি ফিরে গিয়ে কিশোর আগাছানাশক খেয়ে নেয়। তাকে দ্রুত তমলুক মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মৃত্যুর আগে তার ডায়েরিতে শেষ কথাটি লেখা ছিল — ‘মা আমি চুরি করিনি’। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় সুবিচার ও ন্যায় বিচারের দাবি উঠেছে।