চালকের ‘ঘুম’ ডেকে আনলো বিপদ, অ্যাপ ক্যাব দুর্ঘটনায় এবার কাঠগড়ায় উবর

দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরুগামী এক ব্যবসায়ীর জীবনে চরম বিপর্যয় ডেকে আনল অ্যাপ ক্যাব সংস্থা উবরের পরিষেবা। ১১ জুন ভোরবেলায় দিল্লি বিমানবন্দর যাওয়ার পথে চালকের অসাবধানতার কারণে ট্রাকে ধাক্কা মেরে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন দিল্লির ওই ব্যবসায়ী। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা কিছুদিন পর সামনে আসার পরই উবর এবং চালকের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে মৃতের পরিবার।

নিহত ব্যবসায়ী, ৫৯ বছর বয়সী রাকেশ কুমার, টেকনো কনসেপ্ট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও ছিলেন। ১১ জুন ভোর ৪টায় তিনি দিল্লি বিমানবন্দর যাওয়ার জন্য উবর বুক করেছিলেন। বিমানবন্দরগামী পথে ডিএনডি ফ্লাইওভারে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পিছনে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে উবর ক্যাবটি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাকেশ কুমারের। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরেও উবর সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। দুর্ঘটনাস্থলে দীর্ঘক্ষণ ধরে গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে থাকলেও সংস্থা কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

নিহত রাকেশ কুমারের মেয়ে স্মৃতি অরোরা জানিয়েছেন, ভোরবেলাতেই তাঁরা তাঁদের আইফোনে ‘ক্র্যাশ নোটিফিকেশন’ পেয়েছিলেন। প্রথমে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। স্মৃতি বলেন, “মা প্রথমে বাবাকে বারবার ফোন করছিল। কিন্তু ফোন বেজে যায়। তারপর আমি লোকেশন চেক করে দেখি ডিএনডি ফ্লাইওভারেই রয়েছে গাড়ি।” বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় মা ও মেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা দেখেন, একটি টোল প্লাজার কাছে একটি মালবাহী গাড়ির পিছনে ধাক্কা মেরে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে রয়েছে অ্যাপ ক্যাবটি। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের জানান, গাড়ির ভিতরে এক ব্যক্তি আটকে রয়েছেন। স্মৃতি অরোরা বলেন, “ওই কথা শোনার পরে আমরা গিয়ে দেখি ভিতরে আমার বাবা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করে এইমস ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলে, সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।”

গাড়ির চালক সুধীর এই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, গাড়ির টায়ার ফেটে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পরিবার এই দাবি মানতে নারাজ। তাদের দাবি, গাড়ির টায়ার অক্ষত ছিল এবং এর ছবি তুলে পুলিশকে জমা দেওয়া হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, চালক গাড়ি চালানোর সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, যার ফলেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

উবরের বিরুদ্ধে পরিবারের অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। পরিবারের দাবি, দুর্ঘটনার পরেও উবর কোনো খোঁজ নেয়নি। আরও চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, দুর্ঘটনার পর ট্রিপের গন্তব্য দিল্লি বিমানবন্দরের বদলে এইমস ট্রমা সেন্টার করে দেওয়া হয়। এমনকি, দুর্ঘটনার দীর্ঘক্ষণ পর, সকাল ১১টা নাগাদ চালক ট্রিপ শেষ করেন, কিন্তু এই বিষয়েও উবর কোনো খোঁজ নেয়নি বলে পরিবারের অভিযোগ।

স্মৃতি অরোরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “এতক্ষণ ধরে গাড়ি দাঁড়িয়েছিল, উবরের উচিত ছিল বিষয়টি খেয়াল করা। আমরা ১৫ জুন সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করার আগে পর্যন্ত সংস্থার তরফে কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।” পরিবারের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করার পরেই উবরের তরফ থেকে শুধুমাত্র বিমা সংক্রান্ত তথ্য জানানো হয়েছে।

এই ঘটনায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় দিল্লির ময়ূর বিহার ফেজ় ওয়ান থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে উবরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলেও, সংস্থা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এই ঘটনা অ্যাপ ক্যাব সংস্থার যাত্রী সুরক্ষার মান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy