
বিধাননগরের দাপুটে নেতা এবং বর্তমানে বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভের মুখে। যারা চাকরি হারিয়ে পথে বসেছেন, তাঁদের উপর প্রকাশ্যে মেজাজ হারাতে দেখা গেছে তাঁকে। তাঁর গাড়ি আটকাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মুখে যা এসেছে, তাই বলেছেন এই পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। সংবাদমাধ্যমের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন ‘বেশ করেছি’। এমনকি ‘কীসের সাংবাদিক’ বলে হুমকি দিতেও শোনা যায় তাঁকে। একজন জনপ্রতিনিধির মুখে এমন ভাষা শুনে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল। তবে যারা তাঁর রাজনৈতিক অতীত জানেন, তাঁরা মনে করেন, নিজের দলের নেতাদেরও ছেড়ে কথা বলার পাত্র নন সব্যসাচী।
নব্বইয়ের দশক অর্থাৎ ১৯৯০ সাল থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত সব্যসাচী দত্ত। রাজনীতিতে তাঁর উত্থান ঘটে ২০০০ সালে প্রথমবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর। ২০০৫ এবং ২০১০ সালেও তিনি পুরভোটে জেতেন। ২০১১ সালে রাজ্যে প্রথমবার তৃণমূল ক্ষমতায় এলে সেবারই বিধায়ক হন তিনি। এরপর ২০১৫ সালে কয়েকটি পুরসভাকে একত্রিত করে যখন বিধাননগর পুরনিগম তৈরি হয়, তখন তিনিই হন প্রথম মেয়র। ২০১৬ সালে ফের বিধায়ক নির্বাচিত হন সব্যসাচী।
২০১৬ সালের পর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে হাওয়া বদলাতে শুরু করে। একদিকে যখন বাংলায় বিজেপির উত্থান ঘটছে, অন্যদিকে তখন তৃণমূলের অন্দরে সব্যসাচীর সঙ্গে দলের একাংশের বিরোধও বাড়তে থাকে। এই সময়েরই একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো তৎকালীন বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের সব্যসাচীর বাড়িতে গিয়ে লুচি-আলুর দম খাওয়া। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে সব্যসাচীর বাড়িতে বৈঠক সেরে বেরিয়ে মুকুল রায় দাবি করেছিলেন, লুচি খাওয়া ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় বিজেপির আসন সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার কয়েক মাসের মধ্যেই, ওই বছরের অক্টোবরে বিজেপিতে যোগ দেন সব্যসাচী দত্ত। বিজেপির তৎকালীন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের উপস্থিতিতেই তিনি গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান।
কিন্তু বিজেপিতে তাঁর স্থায়ীত্ব খুব বেশিদিনের হয়নি। দু’বছরের মধ্যেই বিজেপির নেতাদের সঙ্গে সব্যসাচীর তিক্ততা বাড়তে শুরু করে। দলের নেতাদের সঙ্গে মতপার্থক্য তো ছিলই, তবে তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর প্রকাশ্য সংঘাত যেভাবে সামনে আসতে থাকে, তাতে একরকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে বিজেপিতে তাঁর সময় ফুরিয়ে এসেছে। হলও তাই। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল জেতার পর ওই বছরের অক্টোবরেই সব্যসাচী আবার পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসেন। এরপর পুরভোটেও তিনি টিকিট পান এবং জেতেন।
রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি সব্যসাচীর সম্পত্তির হিসেবও বেশ চমকপ্রদ। কোটি কোটি টাকার মালিক এই নেতার বাড়ির সামনে অডি, ফরচুনারের মতো বিলাসবহুল গাড়ি দেখা যায়। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, শেয়ার বাজার ও মিউচুয়াল ফান্ড মিলিয়ে সব্যসাচীর মোট বিনিয়োগ ছিল ২ কোটি ২১ লক্ষ টাকা। সেই সময় তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। এই পরিসংখ্যান তাঁর আর্থিক স্বচ্ছলতার ইঙ্গিত দেয়।