ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, কেন্দ্রের অনুমোদন সত্ত্বেও কাজ হয়নি, মুখ্যমন্ত্রী-অভিষেকের বিরুদ্ধে বোকা বানানোর অভিযোগ হিরণের

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ২০২২ সালেই কেন্দ্রীয় সরকার ১২৩৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে দিলেও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ দেব ঘাটালবাসীদের ‘বোকা বানিয়েছেন’ এবং কাজ শুরু করেননি। একইসঙ্গে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাজের নামে লুটপাটের অভিযোগও তুলেছেন।

মঙ্গলবার (আজকের তারিখ অনুযায়ী) এক সাংবাদিক সম্মেলনে (কাল্পনিক পরিস্থিতি) হিরণ চট্টোপাধ্যায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সরব হন। তিনি বলেন, “২০২২ সালেই কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ১২৩৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে দিয়েছিল। এরপরও কেন এই কাজ শুরু হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।” তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ঘাটালের সাংসদ দেব এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে গাফিলতি করেছেন এবং ঘাটালবাসীদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বোকা বানিয়েছেন।

হিরণ চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, তৃণমূল সরকার বরাবরই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। তাঁর দাবি, “প্রতিবারই কাজের নামে তৃণমূল শুধু লুটপাট করেছে, ঘাটালের মানুষের দুর্দশা লাঘবে তাদের কোনো সদিচ্ছা নেই।” তিনি এই প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন এবং এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের জবাবদিহি চেয়েছেন।

হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের এই অভিযোগের পর স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গেছে। তৃণমূল কংগ্রেস এখনও এই অভিযোগের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, এই অভিযোগ নিয়ে শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘাটালের বন্যা সমস্যা দীর্ঘদিনের এবং এই মাস্টার প্ল্যান এলাকার মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই অভিযোগগুলি আগামী দিনে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে।

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের এই বিস্ফোরক অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ অনুমোদন এবং রাজ্য সরকারের বাস্তবায়নে বিলম্বের দিকে আঙুল তুলেছে। ঘাটালবাসীরা এখন এই অভিযোগের সত্যতা এবং এর প্রতিকার চাইছে।

বিশ্লেষণমূলক সংবাদ প্রতিবেদন (আরও গভীর এবং মতামতভিত্তিক)

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অন্তরালে রাজনীতি: কেন্দ্রীয় অর্থের অনুমোদন সত্ত্বেও কেন কাজ নেই? হিরণের অভিযোগ এবং তার তাৎপর্য

পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘদিনের সমস্যা, ঘাটালের বন্যা নিয়ন্ত্রণে বহু প্রতীক্ষিত মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ফের উত্তপ্ত রাজনীতি। এবার বিজেপির বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ দেবের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, ২০২২ সালেই কেন্দ্রীয় সরকার ১২৩৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে দিলেও, সেই অর্থ দিয়ে কাজ শুরু না করে ঘাটালবাসীদের ‘বোকা বানানো’ হচ্ছে। এই অভিযোগ শুধু দুর্নীতির ইঙ্গিতই নয়, এটি আঞ্চলিক রাজনীতির এক গভীর চালচিত্রও তুলে ধরছে।

হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ যদি সত্যি হয় যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় তিন বছর আগেই (২০২২ সালে) ১২৩৯ কোটি টাকা অনুমোদন করে দিয়েছে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে, কেন এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না? ঘাটালের বন্যা সমস্যা প্রতি বছরই হাজার হাজার মানুষের জীবনে বিপর্যয় নিয়ে আসে। এমন একটি সংবেদনশীল প্রকল্পের বাস্তবায়নে বিলম্ব কেন?

হিরণের বক্তব্যে দুটি মূল অভিযোগ রয়েছে: প্রথমত, কেন্দ্রীয় অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হওয়া; দ্বিতীয়ত, রাজ্য সরকারের (বিশেষত শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের) বিরুদ্ধে ঘাটালবাসীদের প্রতারিত করার অভিযোগ। এই অভিযোগগুলি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখতে হবে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে উঠে আসতে পারে। বিজেপি এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘উন্নয়নের নামে বঞ্চনা’ এবং ‘লুটপাট’-এর অভিযোগকে আরও জোরালো করতে চাইছে।

সাংসদ দেবের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলে হিরণ চট্টোপাধ্যায় সম্ভবত তাঁর (দেব) ভাবমূর্তিকেও চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছেন। দেব বরাবরই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সক্রিয়তা দেখিয়েছেন বলে দাবি করেন। তবে, কেন্দ্রীয় অর্থের অনুমোদন সত্ত্বেও যদি কাজ না হয়, তাহলে সেই সক্রিয়তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

এই ঘটনাটি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েনকেও তুলে ধরে। অনেক সময়ই দেখা যায়, কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ বরাদ্দ হলেও বিভিন্ন কারণে রাজ্য সরকার সেই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে বিলম্ব করে। এর পেছনে প্রশাসনিক জটিলতা, জমি অধিগ্রহণ সমস্যা, বা স্রেফ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব থাকতে পারে। হিরণের অভিযোগের পর তৃণমূলের পক্ষ থেকে কী ব্যাখ্যা আসে, তা গুরুত্বপূর্ণ হবে। তারা কি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অসহযোগিতার অভিযোগ তুলবে, নাকি নিজেদের গাফিলতি স্বীকার করবে?

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে এই অভিযোগগুলি আগামী দিনে ঘাটালসহ রাজ্যের বন্যাপ্রবণ এলাকার রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। বিজেপির এই আক্রমণ তৃণমূলকে চাপে ফেলবে, বিশেষত যখন তারা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বিতর্ক হয়তো শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়াবে, বা একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি উঠবে। তবে, আপাতত ঘাটালবাসীদের মনে একটাই প্রশ্ন, তাদের বহু প্রতীক্ষিত মাস্টার প্ল্যান কবে আলোর মুখ দেখবে, নাকি এটি শুধু রাজনীতির দাবার ঘুঁটি হয়েই থাকবে?

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy