
সোদপুরের তরুণী নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ফুলটুসি বেগম ওরফে শ্বেতা খান-কে ঘিরে ক্রমেই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। একটার পর একটা অভিযোগের স্তূপ তৈরি হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে, যা কেবল নির্যাতনের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ‘নীল ছবি’ ব্যবসা, গুলি চালানো এবং সম্পত্তি দখলের মতো ভয়াবহ অপরাধে। হাওড়ার বাঁকড়ার বাসিন্দা ও প্রাক্তন স্বামীর দাবি, শ্বেতা এতটাই প্রভাবশালী যে পুলিশ-প্রশাসনও তাঁর বিরুদ্ধে নড়াচড়া করত না।
অভিযোগ উঠেছে, শ্বেতা একটি প্রোডাকশন হাউসের আড়ালে ‘সফ্ট পর্ন’ বা নীল ছবি নিয়ে কাজ করতেন। এই সূত্রে তাঁর হাত অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এলাকার সমাজবিরোধীরা তাঁর হাতের তালুতে থাকত এবং সামান্য পান থেকে চুন খসলেই তিনি গুন্ডাবাহিনী পাঠিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলির মধ্যে একটি হলো, শ্বেতা তাঁর শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি দখল করতে ভাড়া করা গুন্ডা নিয়ে এসেছিলেন এবং তাঁর উপস্থিতিতেই গুলি চালানো হয়। এলাকার লোকজন সংবাদমাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়েছেন, “ডেনজারার্স মহিলা। এলাকায় গুলিও চালিয়েছিলেন।” তাহলে থানায় অভিযোগ হয়নি কেন? স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শ্বেতা এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে পুলিশ-প্রশাসন কিছুই করত না। উল্টে তিনি এলাকার বহু ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন।
জানা গেছে, শ্বেতা খানের আসল নাম মহসিনা বেগম। পরিচিতরা তাঁকে ‘ফুলটুসি’ বলে ডাকতেন। ২০১৫ সালে আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি, তখনও বাজারে তাঁর ‘শ্বেতা’ নামের পরিচিতি তৈরি হয়নি। তাঁর প্রাক্তন স্বামীর দাবি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুলটুসি রং-রূপ বদলে শ্বেতা খান হন এবং তাঁদের ছেলে আরিয়ান মায়ের ‘আদর্শ শিষ্য’ হয়ে ওঠে। কিন্তু তাঁদের মেয়ে এই কুকীর্তি সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলেও অভিযোগ।
বাঁকড়ার ফকিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নূর আলম অভিযোগ করেছেন, ২০২৩ সালে তাঁর স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য শ্বেতার কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে সুদের নামে অতিরিক্ত ১ লক্ষ টাকা উল্লেখ করা হয়েছিল। এক বছর পেরিয়ে গেলেও নূর সেই টাকা শোধ করতে না পারায় শ্বেতা গুন্ডা পাঠিয়ে নূরের বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং দাবি করেন যে, নূর তাঁর কাছে বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন। নূরের অভিযোগ, শ্বেতা টাকার নামে ছল করে তাদের বাড়িটাই লিখিয়ে নিয়েছিলেন।
এই ফুলটুসি ওরফে শ্বেতা ও আরিয়ান খানের নাম সম্প্রতি সোদপুরের এক তরুণীকে প্রায় ৬ মাস আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িয়েছে। কোনোমতে পালিয়ে এসে ওই তরুণী খড়দহ থানায় শ্বেতা ও আরিয়ানের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরই শ্বেতার একের পর এক কীর্তি জনসমক্ষে আসতে শুরু করেছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নির্যাতিতাকে মারধর করে চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে শ্বেতা খান ও আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার বাঁকড়া ফকিরপাড়ায় শ্বেতার ফ্ল্যাটের পিছন দিক থেকে মাথার চুল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই চুল সোদপুরের তরুণীর কি না, তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনাগুলি রাজ্যের অন্ধকার জগতের এক চাঞ্চল্যকর চিত্র তুলে ধরছে, যেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে একের পর এক অপরাধ করে চলেছে। পুলিশ এখন এই চক্রের মূল উদ্দেশ্য এবং আরও কতজন এর শিকার হয়েছে, তা জানতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।