
১২ই জুন, দুপুর ১টা ৩৯ মিনিট। আমেদাবাদের বিজে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালক সতীন্দর সিং সান্ধু তখন মধ্যাহ্নভোজন সারছিলেন। হঠাৎই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল চারিদিক, প্রবল বিস্ফোরণে কাঁপন ধরল মাটিতে। জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সতীন্দর দেখলেন, কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে সারা আকাশ। কোনো কিছু বোঝার আগেই তিনি দৌড়ে বাইরে এলেন। অ্যাম্বুল্যান্সের সার্ভিস ম্যানেজার জিতেন্দ্র শাহীকে ফোনে ঘটনাটি জানিয়ে দমকলে খবর দেওয়ার কথা বললেন।
সেই বৃহস্পতিবারের দুপুরে এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি গুজরাটের মেঘানী নগর এলাকায় অবস্থিত বিজে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের হস্টেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৬২৫ ফুট উপর থেকে ভেঙে পড়ে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ফ্লাইটের মধ্যে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনেরই মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ২৭৪ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে, যার মধ্যে হস্টেলের ছাত্রছাত্রী ও কর্মীরাও রয়েছেন।
একাই জীবিত, ফিরলেন প্রিয়জনের টানে:
সতীন্দর সিং সান্ধু, এই ভয়াবহ ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি দাবি করেছেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি বিশ্বাসকুমার রমেশকে তিনি বেরিয়ে আসতে দেখেছেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, প্রাণে বেঁচে যাওয়া রমেশ বাইরে আসার পরেও আবার ভিতরে প্রবেশ করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল একটাই — যদি তার পরিবারের কেউ জীবিত থাকেন, তাদের বের করে আনার শেষ চেষ্টা। এটি ছিল এক চরম হৃদয়বিদারক এবং একইসঙ্গে অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী। এছাড়াও সতীন্দর প্রায় সম্পূর্ণ দগ্ধ অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজের একজন সিকিউরিটি গার্ডকে বেরিয়ে আসতে দেখেন।
দ্রুত উদ্ধারকাজ ও শাহীর অভিজ্ঞতা:
সতীন্দরের ফোন পাওয়ার পরপরই দুর্ঘটনাস্থলে পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স এসে পৌঁছয় এবং অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। জিতেন্দ্র শাহী জানান, তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে হস্টেল থেকে ১৫-২০ জনকে সরিয়ে নিয়ে যান। শাহীর কাছেও এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও রমেশের বেঁচে যাওয়াটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। উদ্ধারকাজের প্রসঙ্গে শাহী বলেন, “এই দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটা বেশি, ভাবতেই পারছি না। এর আগেও দুর্ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধার করেছি, কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।”
ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার, রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায়:
বিমানটির ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে শীঘ্রই দুর্ঘটনার আসল কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিমানটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ল, কারিগরি ত্রুটি ছিল কিনা, নাকি অন্য কোনো কারণ — সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে এই ব্ল্যাক বক্সের তথ্যে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কেবল আমেদাবাদ নয়, গোটা দেশকে শোকাহত করেছে। একমাত্র জীবিত ব্যক্তির বেঁচে থাকার অলৌকিক গল্প এবং অসংখ্য প্রাণের বলিদান — এই সবকিছুই এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডির সাক্ষী হয়ে রইল।