
আরজি করের ঘটনা হোক বা এসএসসি-র চাকরিহারাদের আন্দোলন, এমনকি বজবজ-মহেশতলায় সাম্প্রতিক গোলযোগ – প্রতিটি ক্ষেত্রেই কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা আহত হচ্ছেন। সাধারণ কনস্টেবল থেকে শুরু করে আইপিএস অফিসার পর্যন্ত অনেকেরই মাথা ফেটেছে। এই পরিস্থিতির কারণ হিসেবে উঠে আসছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য: অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের একাংশ হালকা হেলমেট বা স্পোর্টস হেলমেট ব্যবহার করছেন, যা আইনশৃঙ্খলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়।
এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার কঠোর পদক্ষেপ নিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। তিনি স্পষ্ট নির্দেশ জারি করেছেন: প্রাণ হাতে নিয়ে আইনশৃঙ্খলার ডিউটিতে ক্রিকেটারদের হেলমেট অথবা স্পোর্টস হেলমেট পরে যাওয়া যাবে না। পুলিশের জন্য বরাদ্দ নির্দিষ্ট সবুজ রঙের হেলমেটই বাধ্যতামূলকভাবে পরতে হবে।
মহেশতলার ঘটনা: ডিসি-র মাথায় আঘাত, নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার
লালবাজার সূত্রে খবর, গত সপ্তাহে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। রবীন্দ্রনগর থানার সামনে থেকে শুরু হয়ে গোলমাল যখন নেচার পার্কের কাছে পৌঁছে যায়, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামে কলকাতা পুলিশও। রাতেই বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন পুলিশকর্তারা। সামনের সারিতে ছিলেন বন্দরের ডিসি হরিকৃষ্ণ পাঁই। ইটবৃষ্টির মাঝেও তিনি বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কিন্তু এই গোলমালের ঘটনায় ডিসি পাঁই গুরুতর জখম হন। তাঁর মাথায় আঘাত লাগে, যার জেরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। জানা গিয়েছে, ওই দিন তাড়াহুড়ো করে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে গিয়ে তিনি একটি স্পোর্টস হেলমেট পরেছিলেন। সেই হালকা হেলমেট ইট-পাথরের আঘাত সহ্য করতে পারেনি। এই ঘটনাই পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি করে।
এসওপি মেনে চলার কড়া বার্তা:
মহেশতলার ঘটনার পরেই পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর’ (এসওপি) কঠোরভাবে মেনে চলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। ক্রাইম কনফারেন্সে তিনি সহকর্মীদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নিয়ম মেনে বর্ম (প্রোটেকশন গিয়ার) পরে এবং ঢাল নিয়েই আইনশৃঙ্খলার ডিউটিতে নামতে হবে।
শুধুমাত্র হেলমেট নয়, গোলমালের আশঙ্কা থাকলে বাহিনীকে ‘প্রোটেকশন গিয়ার’ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। এই কড়া বার্তা ইতিমধ্যেই সমস্ত থানা এবং ব্যাটেলিয়নগুলিতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। নানা ইস্যুতে কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকা উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারণে লালবাজার আগে থেকেই নিজেদের বাহিনীকে সর্বোচ্চ সুরক্ষায় প্রস্তুত রাখতে চাইছে। এই নতুন নির্দেশিকা পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কতটা কার্যকরী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।