
পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক সম্প্রতি এক বিতর্কিত মন্তব্য করে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডগুলোর উচিত ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) তাদের ক্রিকেটারদের পাঠানো বন্ধ করা। তাঁর যুক্তি, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) যদি তাদের খেলোয়াড়দের অন্য দেশের টি-টোয়েন্টি লিগে অংশগ্রহণের অনুমতি না দেয়, তাহলে বিশ্বের অন্যান্য বোর্ডগুলোও একই পথ অনুসরণ করে আইপিএলে খেলোয়াড় পাঠানো থেকে বিরত থাকা উচিত।
পাকিস্তানের একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইনজামাম বলেন, “চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাদ দিন। আইপিএলের দিকে তাকান—বিশ্বের সমস্ত শীর্ষ খেলোয়াড়রা এতে অংশ নেন। কিন্তু ভারতীয় খেলোয়াড়রা অন্য কোনও লিগে খেলতে যান না। তাই সমস্ত বোর্ডের উচিত তাদের খেলোয়াড়দের আইপিএলে পাঠানো বন্ধ করা। আপনি যদি আপনার খেলোয়াড়দের অন্য লিগে ছাড়েন না, তাহলে অন্য বোর্ডগুলোরও কি একই অবস্থান নেওয়া উচিত নয়?”
ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে বিসিসিআইয়ের কঠোর নীতি রয়েছে। তারা বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগে অংশ নিতে পারেন না। তবে মহিলা ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। স্মৃতি মান্ধানা, জেমিমা রড্রিগস এবং হরমনপ্রীত কৌরের মতো তারকারা বিগ ব্যাশ লিগ (বিবিএল), ওমেন্স ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (ডব্লিউসিপিএল) এবং দ্য হান্ড্রেডের মতো বিদেশি লিগে খেলেছেন। কিন্তু পুরুষদের জন্য এই সুযোগ শুধুমাত্র ভারতীয় ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরই মেলে। উদাহরণস্বরূপ, দীনেশ কার্তিক গত বছর অবসরের পর SA20-তে পার্ল রয়্যালসের হয়ে খেলেছেন। যুবরাজ সিং এবং ইরফান পাঠানও GT20 কানাডা এবং লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগে অংশ নিয়েছেন, কিন্তু অবসরের পর।
ইনজামামের এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন আইপিএলের ২০২৫ সংস্করণ শুরুর জন্য প্রস্তুতি চলছে। আগামী ২২ মার্চ থেকে এই টুর্নামেন্ট শুরু হবে, যেখানে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) এবং রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) কলকাতার ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সে মুখোমুখি হবে। অন্যদিকে, পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) আগামী ১১ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত চলবে, যা আইপিএলের সঙ্গে কিছুটা সময়ের মিল রয়েছে।
ইনজামামের এই দাবি ক্রিকেট মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আইপিএল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও লাভজনক টি-টোয়েন্টি লিগ হিসেবে পরিচিত। তবে ভারতীয় খেলোয়াড়দের অন্য লিগে না খেলার নীতি এবং বিসিসিআইয়ের আধিপত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম সংস্করণে অংশ নিলেও, রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ২০০৯ সাল থেকে তাঁরা এই লিগে অংশ নিতে পারেননি। ইনজামামের এই মন্তব্যকে অনেকে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্কের উত্তেজনার প্রতিফলন হিসেবেও দেখছেন।
এই বিষয়ে অন্যান্য ক্রিকেট বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে। তবে ইনজামামের এই আহ্বান আইপিএলের আগে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।