
দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও স্বপ্নপূরণের পর এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেছিলেন। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই নেমে এল চরম বিপর্যয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ছোঁয়ার খবর বাড়ি এসে পৌঁছনোর পরদিনই জানা গেল তাঁর মৃত্যুর দুঃসংবাদ। এভারেস্ট জয়ী বাঙালি পর্বতারোহী সুব্রত ঘোষের এমন মর্মান্তিক পরিণতি মানতে পারছে না তাঁর পরিবার। যে এজেন্সির সঙ্গে তিনি অভিযানে গিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা।
৪৫ বছর বয়সী সুব্রত ঘোষ পেশায় বাগদা ব্লকের কাপাসাটি মিলন বিথি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও তাঁর নেশা ছিল পর্বতারোহণ। পাহাড় চড়ার নেশাতেই ১০ বছর আগে তিনি বসন্ত সিংহ রায়ের মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর-এ যোগ দিয়েছিলেন। ক্লাবের তরফে তাঁকে পাঠানো না হলেও এবার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তিনি এভারেস্ট সামিটে গিয়েছিলেন। শুক্রবার ভোরে তাঁর মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর মা। মাত্র দু’দিন আগেই ভিডিও কলে তাঁর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। এরপরই এসেছিল ছেলের শৃঙ্গ জয়ের সুখবর। কিন্তু সেই ছেলেই যে আর কোনোদিন বাড়ি ফিরবে না, তা যেন তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না।
অন্যদিকে, পরিবারের বাকি সদস্যরা অবশ্য কাঠমান্ডু Snowy Horizon নামক যে এজেন্সির মাধ্যমে সুব্রত অভিযানে গিয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। সুব্রত ঘোষের পিসতুতো দিদি সুমিত্রা দেবনাথ নিজেও একজন পর্বতারোহী এবং দাদার সঙ্গে একই এক্সপিডিশনে বেসক্যাম্প পর্যন্ত গিয়েছিলেন। সেখানেই ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তিনি হতভম্ব হয়ে যান। এজেন্সির সদস্যদের কাছে তিনি স্পষ্ট জানান, এই খবর তিনি মানতে পারছেন না এবং সুব্রত ঘোষের মৃতদেহের ছবি দেখানোর দাবি তুলেছেন। তাঁর দাবি, “কোথায় মৃতদেহ? অন্তত ছবি দেখাক। তবে বিশ্বাস করব।”
পরিবারের অভিযোগ, বিপুল অর্থ ব্যয় করে সামিটে গেলেও এই কঠিন সময়ে এজেন্সি তাঁদের কোনও সাহায্য করছে না। এমনকি, শৃঙ্গ জয়ের পর বৃহস্পতিবার রাতে যখন সুব্রতবাবু বেসক্যাম্পে ফেরেননি, তখন তাঁর খোঁজ চেয়ে এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের তরফে কোনও সাহায্য করা হয়নি। বার বার খুঁজে বের করার অনুরোধ সত্ত্বেও তারা সাহায্য করেননি বলে অভিযোগ পরিবারের।
অন্যদিকে, এজেন্সি সূত্রে জানা গেছে, শৃঙ্গ ছোঁয়ার জন্য দেরিতে বেরোনোর কারণেই সম্ভবত সমস্যা তৈরি হয়। ফেরার পথে এভারেস্ট জয়ী সুব্রত ঘোষের অক্সিজেন শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষে সাউথ কল ও হিলারি স্টেপের মাঝে তিনি আটকে পড়েন। এজেন্সির দাবি, হিলারি স্টেপের কাছেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে এবং দেহ সেখানেই রয়েছে।
এভারেস্ট জয়ের পর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ তাঁর পরিবার ও গ্রামবাসী। এজেন্সির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। ছেলের মৃতদেহ দ্রুত ফেরানোর জন্য সরকারের কাছেও আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।