কোচবিহার রাজবাড়ির দেওয়ালে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ শো-এর মাধ্যমে রাজ আমলের ইতিহাস তুলে ধরার ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এই ঘোষণা কবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে শহরজুড়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে, কারণ এর আগেও বহুবার এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি।
বর্তমান জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনার ঘোষণার প্রায় এক দশক আগে থেকেই এই প্রকল্পের আলোচনা শুরু হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের মন্ত্রীরা এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রাজ্য সরকার একাধিকবার এই প্রকল্প চালু করতে চাইলেও কেন্দ্র থেকে অনুমতি মেলেনি বলে অভিযোগ।
২০১১ সালের পর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী থাকাকালীন গৌতম দেব বেশ কয়েকবার কোচবিহারে এসে রাজবাড়িতে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ওই দপ্তরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষও একই প্রতিশ্রুতি দেন। বার বার এমন স্বপ্নভঙ্গের পর শহরের মানুষ নতুন করে বিশ্বাস করতে দ্বিধা বোধ করছেন।
কোচবিহার পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান জানান, তিনি যখন মন্ত্রী ছিলেন, তখন বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং তারা তথ্যচিত্রের একটি প্রাথমিক নমুনাও দেখিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের অভাবে প্রকল্পটি আটকে যায়।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, এবার কি এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হবে? প্রায় দশ বছর পর কোচবিহারের ইতিহাস কি রাজপ্রাসাদের লাল ইটের দেওয়ালে জীবন্ত হয়ে উঠবে? রাজবাড়ির উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্বে থাকা ইন্ডিয়া ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (ITDC) সঙ্গে জেলাশাসকের এ বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকও হয়েছে।
সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারির শুরুতে ITDC-র সদস্যরা প্রকল্পটি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য রাজবাড়িতে আসবেন। তবে, এত বছর ধরে আটকে থাকা একটি উদ্যোগ হঠাৎ করে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
জানা গেছে, প্রায় তিন বছর আগে কেন্দ্রীয় পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল কোচবিহারে এসে রাজবাড়িতে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর পরেই আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) তৎপর হয় এবং কয়েক মাসের মধ্যেই পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররা সমীক্ষার কাজ শুরু করেন।
অবশেষে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আশা আবার জেগেছে। কোচবিহারের ইতিহাস গবেষক ও লেখক দেবব্রত চাকী এবং কোচবিহারের সাংসদ জগদীশ বর্মা বসুনিয়া উভয়েই এই প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন চান। তাদের মতে, এর মাধ্যমে পর্যটকদের পাশাপাশি কোচবিহারের নতুন প্রজন্মও রাজ আমলের ইতিহাস জানতে পারবে এবং পর্যটকদের ভিড়ও বাড়বে।