
তৃণমূল কংগ্রেসের শুক্রবার ঘোষিত বড় সাংগঠনিক রদবদল রাজ্যজুড়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে একটি হলো বীরভূম জেলা থেকে জেলা সভাপতির পদটি পাকাপাকিভাবে তুলে দেওয়া। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘটল বীরভূমে অনুব্রত মণ্ডলের ‘জেলা সভাপতি’ হিসেবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা একক অধ্যায়ের। তিনি এখন দলের জেলা কোর কমিটির একজন সদস্য মাত্র।
অনুব্রতর ‘বেতাজ বাদশা’ অধ্যায়:
একটা সময় ছিল যখন বীরভূমে তৃণমূল মানেই ছিল অনুব্রত মণ্ডল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর ক্যারিশমা, নিজস্ব বাগ্মীতা এবং বিতর্কিত অথচ প্রভাবশালী মন্তব্যগুলির মাধ্যমে তিনি রাজ্যের রাজনীতিতে এক অন্য জায়গা তৈরি করেছিলেন। ‘উন্নয়নকে দাঁড় করিয়েছিলেন রাস্তায়’ কিংবা ‘চড়াম চড়াম’ ঢাক বাজানোর মতো তাঁর উক্তিগুলি ছিল রাজ্যজুড়ে চর্চার বিষয়। এমনকি তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষের মতো মানুষও কবিতা লিখেছিলেন। সাংসদ, বিধায়ক বা মন্ত্রী কোনও আনুষ্ঠানিক পদ না থাকলেও, তিনিই ছিলেন এলাকার জনপ্রতিনিধিদের প্রেরণা। নিজের ক্যারিশমাতেই তিনি বীরভূমে এক ‘বেতাজ বাদশা’ হয়ে উঠেছিলেন, যা ছিল অনেকের কাছেই অপ্রতিরোধ্য এবং অনন্য।
নতুন সাংগঠনিক কাঠামো ও কোর কমিটি:
এখন থেকে বীরভূমে তৃণমূলের সমস্ত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দায়িত্ব পালনের ভার থাকবে নবগঠিত কোর কমিটির হাতে। ৭ সদস্যের এই কমিটিতে রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল, কাজল শেখ, চন্দ্রনাথ সিনহা, সুদীপ্ত ঘোষ, অভিজিৎ সিংহ, বিকাশ রায় চৌধুরী, এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখযোগ্যভাবে, বীরভূমের দুই লোকসভা সাংসদকেও এই কোর কমিটির বৈঠকে থাকার অনুমতি দিয়েছে দল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও চাপানউতোর:
অনুব্রত মণ্ডলের এই আনুষ্ঠানিক ‘ডানা ছাঁটা’ রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক মহলে জোরদার চর্চা শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশের মতে, একসময় যিনি বীরভূমে দলের শেষ কথা ছিলেন, তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা এভাবে সীমিত করে দেওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে ভোটের আগে এই সিদ্ধান্ত দলের অন্দরে কী প্রভাব ফেলে, তা এখন দেখার। বীরভূমের এই কোর কমিটি নিয়েও অতীতে দলের অন্দরে চাপানউতোর কম ছিল না, বিশেষ করে কমিটির বৈঠক আয়োজন এবং অনুব্রতর উপস্থিতি-অনুপস্থিতি ঘিরে। কাজল শেখের মতো নেতারা প্রকাশ্যেই অসন্তোষ উগরে দিয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সভাপতির পদ তুলে দিয়ে কোর কমিটিকে সর্বময় কর্তা করাটা নতুন ইঙ্গিত বহন করছে।
সিদ্ধান্তের তাৎপর্য:
শুক্রবার বিকালে তৃণমূলের এই ব্যাপক সাংগঠনিক পরিবর্তনের খবর সামনে আসার পর থেকেই বীরভূমের এই সিদ্ধান্তটি বিশেষ নজর কেড়েছে এবং দলের অন্দরের ভবিষ্যৎ শক্তি বিন্যাস নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। এটি অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবেও দেখা হচ্ছে, যেখানে তাঁর প্রভাব আনুষ্ঠানিক পদের তুলনায় কমে এসেছে।