“কেন মাথা ঘামাচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলি?”- যাদবপুরের ঘটনায় গোয়েন্দাদের নজরে বাংলাদেশ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর হঠাৎ তৎপরতা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর কেড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে সরব হয়ে উঠেছে এবং ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এই ঘটনাকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় ও রাজ্য গোয়েন্দারা। তারা বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে।

বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর বিবৃতি

গত ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়িতে প্রথম বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায় আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের তিনটি ছাত্র সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এবং বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন নামক সংগঠনগুলি শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি তার বিবৃতিতে বলেছেন, “শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। ওই পদে থাকতে পারেন না তিনি।”

এছাড়াও, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লিগ সরকারকে স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়ে ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সংগঠনটি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পতনের পক্ষেও সওয়াল করেছে।

গোয়েন্দাদের তদন্ত

বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর এই তৎপরতা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর কেড়েছে। কেন একটি প্রতিবেশী দেশের ছাত্র সংগঠনগুলি পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে এভাবে সরব হয়ে উঠেছে, তা নিয়ে গভীর তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দারা। বিশেষ করে, গত বছর বাংলাদেশে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল রয়েছে। গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন, বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলি পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র আন্দোলনকে কীভাবে ব্যবহার করতে চাইছে।

কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেছেন, “আপনাদের ব্যর্থতার জন্য বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারত। এই ঘটনা নিয়ে কেন কোনও আগাম বার্তা ছিল না প্রশাসনের কাছে?” হাইকোর্টের এই মন্তব্যও গোয়েন্দা তদন্তের গতি বাড়িয়েছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র নির্বাচনের দাবিতে বাম ও অতিবাম ছাত্র সংগঠনগুলি সরব হয়েছে। এই আন্দোলনগুলিতে বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলির সমর্থন গোয়েন্দাদের সন্দেহ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে টার্গেট করে বিবৃতি দেওয়ায় গোয়েন্দারা বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে।

সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও প্রশাসন এই ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। গোয়েন্দারা বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলির নেটওয়ার্ক ও তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। এছাড়াও, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গোয়েন্দা তদন্তের ফলাফলই নির্ধারণ করবে, বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলির এই তৎপরতার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy