কী ভাবে হত্যা করা হয় রাজা রঘুবংশীকে? জেনেনিন কি বলছে খুনের অটোপসি রিপোর্ট

ইন্দোরের সদ্যবিবাহিত ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশীর মেঘালয় হানিমুন ট্রিপের পরতে পরতে যেন মিশেছিল থ্রিলার সিনেমার চিত্রনাট্য। নিখোঁজ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার এবং অবশেষে ‘ভিকটিম’ থেকে ‘খলনায়িকা’য় রূপান্তরিত স্ত্রীর নাটকীয় মোড় — গত ১৭ দিনের টানটান উত্তেজনা শেষ হলো এক শিউরে ওঠা অবিশ্বাস্য তথ্যে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই স্পষ্ট হয়েছে, কী ভয়ংকর উপায়ে হত্যা করা হয়েছিল রাজাকে।

প্রথমত, এটি একটি নিখোঁজ দম্পতির ঘটনা হিসেবেই দেখা হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, হানিমুনে ঘুরতে গিয়ে হয়তো কোনো বিপদে পড়েছেন নবদম্পতি। যখন ২ জুন মেঘালয়ের ওয়েইসাওডং জলপ্রপাতের কাছে একটি গিরিখাত থেকে রাজার মৃতদেহ উদ্ধার হয়, তখন অঘটনের তত্ত্ব আরও পোক্ত হয়। তখনও স্ত্রী সোনমের কোনো খোঁজ না মে পাওয়ায় প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। টানা ১৭ দিনের অভিযানের পর পুলিশি তদন্তে যে তথ্য সামনে আসে, তা রীতিমতো স্তম্ভিত করে দেয়। দেখা যায়, এই ঘটনার ‘ভিকটিম’ নন, বরং স্ত্রী সোনমই ছিলেন মূল ‘ভিলেন’। তিনি তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রীতিমতো ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে সদ্যবিবাহিত স্বামীকে খুনের ছক কষেছিলেন। এত দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে রবিবার পুলিশের জালে ধরা পড়েন মৃত রাজা রঘুবংশীর স্ত্রী সোনম।

রাজা রঘুবংশীর মৃতদেহ উদ্ধারের প্রায় সাত দিন পর ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছেন তদন্তকারীরা। রিপোর্টে জানা গিয়েছে, রাজা রঘুবংশীর মাথায় দুটি গভীর ক্ষত ছিল। সামনে এবং পিছন থেকে দু’বার ভারী কোনো জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। এই আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, গাছ কাটার মতো কোনো ধারালো যন্ত্র এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই তথ্যগুলো নৃশংসতার মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

রাজা রঘুবংশীর দেহ উদ্ধারের একদিন পরই ঘটনাস্থলের কাছাকাছি সোহরারিমের জঙ্গল ও মাওলাখিয়াত গ্রামের মাঝামাঝি জায়গা থেকে রক্তমাখা অস্ত্র এবং দম্পতির ব্যবহার করা বর্ষাতি উদ্ধার হয়। এর আগেই তাদের পরিত্যক্ত স্কুটারটি পাওয়া গিয়েছিল। সোনমের খোঁজ না মেলায় স্নিফার ডগ এবং ড্রোন ব্যবহার করে তার সন্ধান চালানো হয়। ১৫ দিন ধরে মেঘালয়ের আনাচ-কানাচে তন্নতন্ন করে খোঁজার পরও সোনমের খোঁজ না মেলায় এমনকি সিবিআই তদন্তের দাবিও তোলা হয়েছিল।

অবশেষে পাওয়া গেল সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য – উত্তরপ্রদেশের গাজিপুরে সন্ধান পাওয়া যায় সোনম রঘুবংশীর। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, প্রেমিকের সঙ্গে পূর্বপরিকল্পনা করে রাজাকে মেঘালয় নিয়ে গিয়েছিলেন সোনমই। সেখানেই পথের কাঁটা দূর করতে ভাড়াটে খুনি লাগিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোনমের প্রেমিক-সহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হাড়হিম করা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি খুঁটিনাটি জানতে অভিযুক্তদের জেরা করছে পুলিশ। এই ঘটনা একদিকে যেমন সম্পর্কের অন্ধকার দিকটি তুলে ধরেছে, তেমনই পুলিশের অদম্য গোয়েন্দাগিরি ও তদন্ত ক্ষমতার এক দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy