
নদিয়ার কালীগঞ্জে উপনির্বাচনে তৃণমূলের বিজয় মিছিলের সময় বোমার আঘাতে ১০ বছরের এক নাবালিকা, তমান্না খাতুনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে রাজ্যজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সোমবারের এই ভয়াবহ ঘটনার পর মঙ্গলবার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ চারজন মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে। ধৃতরা হলেন আদর শেখ, মানোয়ার শেখ, কালু শেখ এবং আনওয়ার শেখ। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে এবং মঙ্গলবারই তাদের আদালতে তোলা হবে।
ঘটনাটি ঘটেছিল সোমবার, কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ভোটগণনার দিন। ফল ঘোষণার আগেই যখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করতে চলেছেন, তখনই মোলান্দি গ্রামে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা বিজয় মিছিল বের করে। পরিবারের দাবি অনুযায়ী, সে সময় মা-এর হাত ধরে বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তমান্না। অভিযোগ উঠেছে, সেই আনন্দ মিছিল থেকেই ছোড়া হয় বোমা, যা সরাসরি তমান্নার গায়ে লাগে। বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ছোট্ট তমান্নার দেহ, মায়ের চোখের সামনেই নিভে যায় একটি প্রাণ।
সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, তমান্নার পরিবার এলাকায় সিপিএম সমর্থক হিসেবে পরিচিত। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই বোমা হামলা কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশেই ইচ্ছাকৃতভাবে চালানো হয়েছে। নিহত নাবালিকার মা বুকফাটা কান্নায় প্রশ্ন তুলেছেন, “উৎসব করে কি মানুষ মেরে দেবে? ওদের আনন্দের জন্য আমার কোল খালি করে দেবে?” এই প্রশ্ন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশের দিকেই আঙুল তুলেছে।
ঘটনার পরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যান্ডলে গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, “কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অন্তর্গত বড়চাঁদঘর এলাকায় বোমা বিস্ফোরণে এক নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে। আমি স্তম্ভিত, অত্যন্ত ব্যথিত। পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। পুলিশ অবশ্যই এ বিষয়ে দ্রুত কড়া আইনি পদক্ষেপ নেবে। দোষীদের যত দ্রুত সম্ভব কড়া শাস্তি দিতে হবে।”
এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং জেলা প্রশাসনের কাছে ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে। রাজ্য পুলিশও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছে, “এই ঘটনায় যারা দায়ী, তারা কোনওভাবেই রেহাই পাবে না। অভিযুক্তদের ধরতে একাধিক জায়গায় তল্লাশি চলছে।”
বর্তমানে মোলান্দি এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত নাবালিকার পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া, যা রাজ্যজুড়ে এক গভীর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
একটি উপনির্বাচনের বিজয় মিছিল থেকে কীভাবে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে, তা নিয়ে এলাকাবাসী এবং বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর পিছনে শুধুই কি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নাকি অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে আছে, সেই উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।