করিমঞ্জের নাম কি আদৌ শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ? জেনেনিন বিস্তারিত

আসাম রাজ্যের বাংলাদেশ লাগোয়া করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন করে শ্রীভূমি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) আসামের রাজধানী দিসপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বলা হচ্ছে, শ্রীভূমি নামটি নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া। আদৌ কি তিনি এই নাম দিয়েছিলেন? এ নিয়ে অনেকের দ্বিমত রয়েছে।

ইতিহাসবিদরা বলছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি ১০ লাইনের নামহীন কবিতা লিখেছিলেন, যেখানে সুন্দরী শ্রীভূমির উল্লেখ আছে। কিন্তু সেটা তিনি লেখেন ১৯৪৭-পূর্ব অবিভক্ত সুরমা ভ্যালি ডিভিশনের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে। বাংলা থেকে দূরে ‘নির্বাসিত’ হয়ে আছে শ্রীভূমি – এটাই লিখেছিলেন তিনি।

তাই শ্রীভূমি নাম কখনই করিমগঞ্জ জেলাকে বর্ণনা করতে লেখেননি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এমনটাই মত একাধিক ইতিহাসবিদের।

করিমগঞ্জের নাম শ্রীভূমি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ?

এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা যে কবিতাটির কথা তোলা হচ্ছে, সেটি দশ লাইনের একটি নামহীন কবিতা। তিনি লিখেছিলেন : মমতাবিহীন কালস্রোতে/ বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হোতে/ নির্বাসিতা তুমি / সুন্দরী শ্রীভূমি।

‘এই কবিতাটির একটা প্রেক্ষাপট আছে’ বলছিলেন জয়ন্ত ভূষণ ভট্টাচার্য নামে ভারতীয় এক ইতিহাসবিদ। তার কথায়, ‘১৯১৯ সালে সিলেট বা শ্রীহট্ট যাওয়ার পথে রবীন্দ্রনাথ একবারই করিমগঞ্জে এসেছিলেন। তখন সেটা ছিল সুরমা ভ্যালি ডিভিশন। ট্রেনে আসার পথে সুরমা ভ্যালির সৌন্দর্য দেখে এবং মূল বাংলা থেকে ‘নির্বাসিত’, অর্থাৎ বাংলা থেকে সিলেট এবং কাছাড়কে বার করে নিয়ে আসামের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার ‘কষ্ট’ দেখেই রবীন্দ্রনাথ ওই পঙক্তিটি লেখেন। করিমগঞ্জ স্টেশনে তিনি কিছুক্ষণ ছিলেন ঠিকই, তবে সেখানে বসেও কবিতাটি তিনি লেখেননি।’

‘তাই করিমগঞ্জ জেলাকে রবীন্দ্রনাথ শ্রীভূমি হিসাবে বর্ণনা করেছেন বা তার স্বপ্ন ছিল শ্রীভূমি নামটি, এই আখ্যানের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, বলেন ভারতীয় এই ইতিহাসবিদ।

করিমগঞ্জ নামের ইতিহাস

করিমগঞ্জ জেলা হিসাবে স্বীকৃতি পায় ১৯৮৩ সালে। তার আগে এটি মহকুমা শহর ছিল। দেশভাগের আগে অবশ্য সিলেট জেলার অন্যতম মহকুমা ছিল করিমগঞ্জ, সেই ১৮৭৮ সাল থেকে। আনুষ্ঠানিকভাবে করিমগঞ্জ মহকুমা হয় ১৮৭৮ সালে। এই অঞ্চলে একজন মিরাসদার বা ছোট জমিদার ছিলেন মুহম্মদ করিম চৌধুরী নামে। তার নাম থেকেই এলাকার নাম করিমগঞ্জ হয়েছে বলে দাবি করেন করিমগঞ্জের ইতিহাস গবেষক বিবেকানন্দ মহন্ত।

ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচেষ্টা?

বিজেপি শাসিত আসাম সরকারের এই নাম বদলের সিদ্ধান্তে বারবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গ তুলে আনছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

অধ্যাপক জয়ন্ত ভূষণ ভট্টাচার্য বলেন, ‌‘পুরো বরাক-সুরমা ভ্যালির বাসিন্দারাই গর্ব করে নিজেদের ‘শ্রীভূমি’র সন্তান বলে থাকেন। আমাদের জন্মভূমির এই অঞ্চলকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে নামে বর্ণনা করে গেছেন, তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট গর্ব আছে।

‘কিন্তু এখন শুধু করিমগঞ্জকে ‘শ্রীভূমি’ বলে নাম দিয়ে দেওয়ার ফলে বরাক-সুরমা ভ্যালি সহ বৃহৎ সিলেটের মূল বাসিন্দাদের কাছ থেকে ওই নামটি ব্যবহার করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। একটা মাত্র জেলায় রবীন্দ্রনাথের দেওয়া এই নামটা আটকিয়ে দেওয়া হলো। এটাই আমাদের কষ্টের জায়গা’।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy