ওবিসি সংরক্ষণে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের চ্যালেঞ্জ, নিয়োগ-ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা

ওবিসি সংরক্ষণ তালিকা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। জরুরি ভিত্তিতে ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’ দাখিল করে হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজের আবেদন জানিয়েছে নবান্ন। রাজ্যের দাবি, এই স্থগিতাদেশের জেরে কলেজ ভর্তি এবং এসএসসি’র নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, যা লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলছে।

গত ১৭ই জুন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের তৈরি করা নতুন ওবিসি সংরক্ষণ তালিকার উপর আগামী ৩১শে জুলাই পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। যদিও আদালত জানিয়েছিল, ওবিসি সংরক্ষণের পুরনো আইন অনুযায়ী নিয়োগ ও ভর্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু রাজ্য সরকারের যুক্তি, নতুন তালিকা বাতিল হওয়ায় সামগ্রিক প্রক্রিয়াতেই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।

নিয়োগ ও ভর্তিতে প্রভাবের আশঙ্কা:

রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে তাদের আবেদনে মূলত নিয়োগ ও ভর্তির ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়টিকেই তুলে ধরেছে। রাজ্যের কলেজগুলিতে ভর্তির পোর্টালে ওবিসি সংরক্ষণের উল্লেখ থাকায় ইতিমধ্যে আদালত অবমাননার মামলাও দায়ের হয়েছে। আগামীকাল, ২৬শে জুন, সেই মামলার শুনানি রয়েছে। যদিও রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, আপাতত ওবিসি প্রার্থীদের জেনারেল ক্যাটাগরি হিসাবেই বিবেচনা করা হবে।

অন্যদিকে, ২০১৬ সালের প্যানেলের ২৬ হাজার শিক্ষক ছাঁটাইয়ের নির্দেশের পর রাজ্য সরকার সম্প্রতি ৪২ হাজারেরও বেশি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আগামী ১৪ই জুলাই পর্যন্ত আবেদনপত্র গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ায় কমিশনের পক্ষ থেকেও কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি, যা নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

কেন এই আইনি লড়াই?

গত ২২শে মে কলকাতা হাইকোর্ট এক যুগান্তকারী রায়ে ২০১০ সালের পর তৈরি হওয়া রাজ্যের সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, রাজ্যের তরফে যথাযথ সমীক্ষা ছাড়াই নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং ওবিসি সংক্রান্ত সমীক্ষা নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়নি। যদিও রাজ্য ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ কমিশনের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছিলেন, হাইকোর্টের সমস্ত নির্দেশ মেনেই সমীক্ষা করা হয়েছে। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেও, এখনও পর্যন্ত শীর্ষ আদালত হাইকোর্টের রায়ে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি। এর মাঝেই নতুন তালিকার উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।

রাজ্য সরকারের এই সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্তে রাজ্যের নিয়োগ এবং ভর্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ কোন দিকে যায়, এখন সেদিকেই তাকিয়ে শিক্ষামহল ও চাকরিপ্রার্থীরা। শীর্ষ আদালতের রায় এই জটিলতার সমাধান সূত্র দিতে পারে কিনা, সেটাই এখন দেখার।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy