
কোভিড মহামারীর চরমে এক মহিলা রোগীকে চিকিৎসা না করে সরাসরি ‘মেরে ফেলার’ নির্দেশের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মহারাষ্ট্রের এক সরকারি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ২০২১ সালের এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা সম্প্রতি সামনে এসেছে একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর, যেখানে অভিযুক্ত চিকিৎসকের এমন নির্দেশ স্পষ্টভাবে শোনা যায়। যদিও এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করা হয়নি, তবে পুলিশ ইতিমধ্যেই একটি এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত দুই চিকিৎসক হলেন ডাঃ শশীকান্ত দেশপাণ্ডে এবং ডাঃ শশীকান্ত ডাঙ্গে। ডাঃ দেশপাণ্ডে লাতুর জেলার উদগির সরকারি হাসপাতালের অতিরিক্ত জেলা সার্জন। ডাঃ ডাঙ্গে উদগীরের একটি কোভিড-১৯ কেয়ার সেন্টারে নিযুক্ত ছিলেন, যেখানে কউসর ফাতিমা নামে এক কোভিড আক্রান্ত মহিলা ভর্তি ছিলেন।
ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপটিতে ডাঃ দেশপাণ্ডেকে বলতে শোনা যায়: “কাউকে ভিতরে যেতে দিও না। ওই দয়ামি মহিলাকে (মহিলার স্বামীর নাম দয়ামি আজিমোদ্দিন গউসুদ্দিন) মেরে ফেল।” ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ডাঃ ডাঙ্গে সতর্ক করে জানান যে, অক্সিজেনের সাপোর্ট ইতিমধ্যেই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মহিলার স্বামীর অভিযোগ:
কউসর ফাতিমার স্বামী গাউসুদ্দিন সম্প্রতি এই ঘটনার বিষয়ে পুলিশে একটি এফআইআর দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি তাঁর কোভিড আক্রান্ত স্ত্রীকে উদগীরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। নান্দেদ রোডের এক ভবনে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলছিল এবং ডাঃ ডাঙ্গে সেই কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন।
ফাতিমা ১০ দিন সেখানে ভর্তি ছিলেন। ঘটনার দিন, অর্থাৎ সপ্তম দিনে, গাউসুদ্দিনের পাশেই বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন ডাঃ ডাঙ্গে। সেই সময়েই ডাঃ দেশপাণ্ডের ফোন আসে। ডাঃ ডাঙ্গে ফোনটি স্পিকারে রেখেছিলেন। ডাঃ দেশপাণ্ডে কতগুলি বেড ফাঁকা আছে জানতে চাইলে ডাঃ ডাঙ্গে জানান যে একটিও নেই। গাউসুদ্দিনের অভিযোগ, এর পরেই ডাঃ দেশপাণ্ডে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “দয়ামি রোগীকে মেরে ফেলো। এই ধরনের লোকদের সঙ্গে কী করতে হয় তা তুমি ভালো করেই জানো।” শুধু তাই নয়, এই কথোপকথনের সময়ে ডাঃ দেশপাণ্ডে তাঁর সম্প্রদায় সম্পর্কে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছিলেন বলেও অভিযোগ গাউসুদ্দিনের।
কেন এত দেরিতে এফআইআর?
গাউসুদ্দিন জানিয়েছেন, সেই সময়ে চিকিৎসকের ওই মন্তব্য শুনে তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মুখ বন্ধ রেখেছিলেন, কারণ তাঁর স্ত্রী তখনও হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর কয়েকদিন পর তাঁর স্ত্রী সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়। গাউসুদ্দিন ঘটনার কথা ভুলেও গিয়েছিলেন।
তবে ২০২৫ সালের ২ মে, এই অডিও ক্লিপটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হয়। কে সেটি রেকর্ড করেছে এবং কেই বা ফাঁস করেছে, তা এখনও অজানা। সোশ্যাল মিডিয়ায় পুনরায় চিকিৎসকের ওই ‘বিরক্তিকর’ মন্তব্য শুনে গাউসুদ্দিনের মনে আঘাত লাগে। তাঁর ধর্মীয় ভাবাবেগেও আঘাত লেগেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এর পরেই তিনি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশি তদন্ত শুরু:
গাউসুদ্দিনের অভিযোগের ভিত্তিতে ২৪ মে ডাঃ দেশপাণ্ডের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষপূর্ণ কাজ’ করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, পুলিশ ইতিমধ্যে ডাঃ দেশপাণ্ডের মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং তাঁকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করা হচ্ছে এবং অডিও ক্লিপটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। ডাঃ ডাঙ্গেকেও একটি নোটিশ পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে তিনি এখন লাতুরে নেই বলে জানা গিয়েছে; তিনি ফিরলেই তাঁর মোবাইল ফোনটিও বাজেয়াপ্ত করে তদন্ত করা হবে।
এই ঘটনা একদিকে যেমন চিকিৎসকদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তেমনই কোভিড মহামারীর সময় হাসপাতালের অব্যবস্থা এবং রোগীদের প্রতি সম্ভাব্য অবহেলার এক অন্ধকার দিক উন্মোচন করেছে।