
আসাম রাজ্যে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বিরোধী অভিযান তীব্রতা লাভ করেছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, গত কয়েক মাসে ৩৩০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষকে বাংলাদেশে ‘পুশ’ করা হয়েছে। ১৯৫০ সালের Immigrants (Expulsion from Assam) আইন অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। রোববার আসাম বিধানসভার এক বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখার সময় মুখ্যমন্ত্রী এই তথ্য জানান এবং অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ‘জোরালো অভিযান চলমান থাকবে’ বলে ঘোষণা করেন।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “আসামের অভিবাসন বিষয়ক বিশেষ আইনের আওতায় আসামের জেলাগুলোর জেলাপ্রশাসকদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার জেরে গত কয়েক মাসে আমরা ৩৩০ জনেরও বেশি অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠাতে পেরেছি।” তার এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে এবার প্রশাসনিক স্তরেই সরাসরি ‘পুশব্যাক’ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী নাম উল্লেখ না করে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের আসাম শাখার প্রেসিডেন্ট গৌরব গগৈকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসামের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চলছে এবং এই অপপ্রচারকারীরা গৌরব গগৈ-কে নেতা হিসেবে মানে।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “আমরা ফেসবুকে এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৬০০টি অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করেছি। এই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ফিলিস্তিন এবং আসাম সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। আসাম সম্পর্কে যেসব তথ্য এসব অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করা হয়— সেগুলো অসত্য, আক্রমণাত্মক এবং রুচিহীন। ইসলামাবাদ, রিয়াদ এবং সৌদি আরব থেকে পরিচালিত হয় এই অ্যাকাউন্টগুলো। যারা এগুলো চালান, তারা রাহুল গান্ধীকে নয়, আসামের একজন বিশেষ নেতাকে পছন্দ করেন।” মুখ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেন, তার কাছে এ সংক্রান্ত প্রমাণ আছে এবং আগামী ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তিনি সংবাদমাধ্যমকে তথ্য-প্রমাণসহ বিস্তারিত জানাবেন।
তথাকথিত অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে উল্লেখ করে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তার বক্তব্যের শেষে বলেন, “আমি প্রথমে একজন অসমিয়া, তারপর মুখ্যমন্ত্রী। আমার যাবতীয় কর্মকাণ্ডে আমি সবসময় তা প্রতিফলিত করার চেষ্টা করি। আসামের নিরাপত্তা ও স্বার্থকে রক্ষা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই কড়া অবস্থান আসামের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিদেশি অপপ্রচারের অভিযোগ এবং কংগ্রেস নেতাকে সরাসরি আক্রমণের ঘটনা রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ‘পুশব্যাক’ অভিযান এবং তার রাজনৈতিক প্রভাব আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: এনডিটিটি ওয়ার্ল্ড