প্রায় এক বছর হতে চলেছে ভয়াবহ আরজি কর হাসপাতাল কাণ্ড। ২০২৩ সালে তরুণী এক চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল গোটা রাজ্য। সেই ঘটনায় উঠে আসে হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের নাম। দু’জনের বিরুদ্ধেই রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। তদন্ত এখনও চলছে। এবার ফের নতুন করে আলোচনায় তারা—আদালতের নির্দেশে এবার সশরীরে হাজিরা দিতে হবে দু’জনকেই।
গত মঙ্গলবার, বিচারক অরিজিৎ মণ্ডল স্পষ্ট নির্দেশ দেন—সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে হবে। মামলার শুনানিতে নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়, ঘটনাস্থলটি (হাসপাতালের সেই নির্দিষ্ট জায়গা) আদালত নিজে দেখে আসুক।
এই প্রেক্ষিতে আদালত শুধু অভিযুক্তদের নয়, সরকারি কৌঁসুলীকেও পরবর্তী শুনানিতে হাজির থাকতে বলেছে।
অভিজিৎ মণ্ডল: সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করলেও, জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু জামিনের পর একবারও আদালতে হাজির হননি, এমন অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক নির্দেশে তিনি বাধ্য হয়ে হাজিরা দিয়েছেন।
সন্দীপ ঘোষ: ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে জামিন পেলেও, বর্তমানে তিনি আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় জেল হেফাজতে আছেন। তাঁরও আদালতে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবার একাধিকবার আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে, অভিযুক্তদের যেন অবিলম্বে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। তাদের দাবি, “এরা শুধুমাত্র উচ্চপদস্থ ব্যক্তি নন, বরং ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাই শাস্তি জরুরি।”
তারা আরও বলেন, বিচার শুধু নয়, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বদল ও প্রশাসনিক সংস্কার এই মামলার মাধ্যমে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।
এই ঘটনা শুধু একটি ধর্ষণ ও খুন নয়—এটি স্বাস্থ্য পরিষেবা, নিরাপত্তা, প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থার একটি ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। একটি সরকারি হাসপাতালে, চিকিৎসা শিক্ষার্থী যখন নিজেই নিরাপদ নয়, তখন সাধারণ নাগরিকের জন্য সেই স্থানে ভরসা রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত?
এই মামলার ভবিষ্যত রায় শুধু অভিযুক্তদের নয়, গোটা ব্যবস্থার ভবিষ্যতের দিক নির্ধারণ করবে। সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের সশরীরে উপস্থিতি নিশ্চিত করলে নতুন প্রমাণ উঠে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে।
নির্যাতিতার পরিবার যেমন বিচার চায়, তেমন সমাজও চায় একটি স্পষ্ট বার্তা—ক্ষমতাশালী হলেও কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।