
পশ্চিমবঙ্গের জন্য বহু প্রতীক্ষিত স্বস্তি এনে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের এক গুরুত্বপূর্ণ রায়। বুধবার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে যে, আগামী ১লা অগাস্ট থেকে রাজ্যে কেন্দ্রীয় ‘একশো দিনের কাজ’ (MGNREGA) প্রকল্পটি পুনরায় চালু করতে হবে। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কেন্দ্র সরকার এভাবে কোনো প্রকল্প বন্ধ করে দিতে পারে না। হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তবে একইসাথে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে, রাজ্য এই রায়ের ‘রিভিউ পিটিশন’ দাখিল করবে।
মমতার শর্ত: বকেয়া টাকা ফেরত চাই
হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা আদালতে যাইনি, গিয়েছিল একটি স্বশাসিত সংস্থা। আমরা হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু রিভিউ পিটিশনে যেতে চাই। জানতে চাই, যে পরিমাণ টাকা বকেয়া রয়েছে তা কীভাবে পাওয়া যাবে। এটা মানুষের টাকা, কোনো দলের বা কেন্দ্রের নয়।”
মমতা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেন যে, গত চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার ‘একশো দিনের কাজ’ প্রকল্পের জন্য রাজ্যকে এক টাকাও দেয়নি। যারা আগে কাজ করেছে, তারাও তাদের প্রাপ্য টাকা পায়নি। তিনি দিল্লির বুকে সাংসদদের আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, যেখানে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল এবং রেলের বুকিং বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। “শেষে বাসে করে গরিব মানুষদের দিল্লি যেতে হয়েছিল, কিন্তু কেন্দ্র একবারও তাদের কথা শোনেনি,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের নিজস্ব প্রকল্পের সাফল্য ও কেন্দ্রের কাছে ‘এরিয়ার’ দাবি
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আদালত অগস্ট থেকে কাজ শুরু করতে বলেছে। কিন্তু চার বছর ধরে কাজ হলো না, কোনো টাকা দেওয়া হলো না। রাজ্য সরকার নিজের তহবিল থেকে সেই টাকা দিয়েছি। এখন কেন্দ্রকে এরিয়ার-সহ টাকা দিতে হবে। জমি কিনলে যেমন বাজার মূল্যে টাকা দিতে হয়, তেমনই এখানে যে দিন থেকে টাকা বন্ধ হয়েছে, সেই দিন থেকে টাকা দিতে হবে, কারণ আমরা কাজ চালিয়ে গিয়েছি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যখন গ্রামীণ রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তখন রাজ্য সরকার নিজস্ব উদ্যোগে ‘পথশ্রী’ প্রকল্প চালু করে। একইভাবে, আবাস যোজনা বন্ধ হওয়ার পর ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প শুরু করা হয়, যার মাধ্যমে রাজ্যের নিজস্ব অর্থে ২৮ লক্ষ মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে ৪৭ লক্ষ ঘর তৈরি হয়েছিল। ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ১২ হাজার রাস্তা তৈরি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও হাজার হাজার রাস্তা তৈরি হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
‘আমাদের প্রাপ্য অন্য রাজ্যকে কেন?’
মুখ্যমন্ত্রী একটি তীক্ষ্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেন, “আমাদের প্রাপ্য টাকা অন্য রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে। এটা কি অপরাধ নয়? কেন আমাদের টাকা অন্য রাজ্যে দেওয়া হবে?” তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, হাইকোর্টের রায় রাজ্যের পক্ষে এলেও, রাজ্যের সম্পূর্ণ ন্যায্য পাওনার জন্য রাজ্য সরকার আদালতের দ্বারস্থ হবে।
হাইকোর্টের নির্দেশে ১লা অগাস্ট থেকে রাজ্যে ‘১০০ দিনের কাজ’ পুনরায় চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কেন্দ্র যেকোনো শর্ত আরোপ করতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে। সংবিধান হত্যা দিবস পালনে আপত্তি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠি নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী তার অসন্তোষ প্রকাশ করেন। হাইকোর্টের এই রায় এবং মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা আক্রমণ রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন করে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের জন্ম দিয়েছে।