
ঋণের টাকা শোধ করতে না পারার ‘অপরাধে’ স্বামীর বদলে স্ত্রীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গাছে বেঁধে অমানবিক মারধর ও নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলায়। এই বর্বর ঘটনায় অভিযুক্ত মহাজন মুনিকান্নাপ্পাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যা রাজ্যজুড়ে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ বছর বয়সী সিরিশা নামের ওই মহিলা সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ তার সন্তানকে স্কুল থেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই তাকে দেখে ফেলে স্থানীয় মহাজন মুনিকান্নাপ্পা। সিরিশার স্বামী থিম্মারায়প্পা প্রায় তিন বছর আগে এই মুনিকান্নাপ্পার কাছ থেকে ৮০,০০০ টাকা ধার নিয়েছিলেন। তবে, সেই ঋণ শোধ না করেই সপরিবারে গ্রাম ছেড়ে চলে যান ওই দম্পতি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সিরিশা বর্তমানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করে পরিবার চালাচ্ছিলেন এবং পাশাপাশি স্বামীর নেওয়া ঋণ শোধের চেষ্টাও করছিলেন। কিন্তু মহাজন তার যুক্তি মানতে নারাজ। প্রকাশ্য রাস্তায় সিরিশাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়, এরপর তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করা হয়। শুধু তাই নয়, তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে চাওয়া মানুষদেরও অভিযুক্ত আক্রমণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খবর পেয়ে কুপ্পাম থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং অভিযুক্ত মুনিকান্নাপ্পাকে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য ও জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন. চন্দ্রবাবু নাইডু এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং অভিযুক্তের গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং নির্যাতিত পরিবারকে সবরকম সাহায্য প্রদান করা হয়।
নারী নির্যাতনের এই বর্বর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিত্তুর জেলায় ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ঋণগ্রহীতার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের উপর এমন বর্বরোচিত হামলা কেন? পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় কড়া আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই ঘটনা সমাজের বুকে ঋণের জালে আটকে পড়া অসহায় মানুষের করুণ পরিণতি আবারও তুলে ধরল।