উষ্ণ আবহাওয়ায় আপেল ফলিয়ে তাক লাগালেন মুর্শিদাবাদের স্কুল শিক্ষক! তিন বছরে বাম্পার ফলন

উষ্ণ-ক্রান্তীয় জলবায়ু উপেক্ষা করে টানা তিন বছর ধরে আপেল ফলিয়ে চমক সৃষ্টি করলেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার এক স্কুল শিক্ষক। রূপেশ দাস নামের ওই শিক্ষক তাঁর বাগানে হিমাচল প্রদেশের তিনটি ভিন্ন প্রজাতির আপেল গাছ লাগিয়েছেন এবং তাতে সাফল্যও পেয়েছেন।

রূপেশবাবুর বাগানে ডরসেট গোল্ডেন (Dorsett Golden Apple) প্রজাতির আপেল সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, আনা (Anna Apple) প্রজাতির আপেল আকৃতির দিক থেকে বেশ বড়। তবে এইচআরএমএন-৯৯ (HRMN-99 apples) প্রজাতির আপেল গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম বলে জানিয়েছেন রূপেশ। এবছর তাঁর বাগানের ছয়টি গাছের মধ্যে পাঁচটিতেই ৪০-৪৫টি করে ফল ধরেছে।

বেলডাঙা পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাছাড়িপাড়ায় রূপেশবাবুর বাড়ির পাশে দেড় কাঠা জমিতে এই আপেল বাগান দেখতে প্রতিদিন শয়ে শয়ে মানুষ ভিড় করছেন। চার বছর আগে হিমাচলের একটি ফার্ম থেকে অনলাইনে ১০টি আপেল গাছের চারা আনিয়েছিলেন নপুকুড়িয়া নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

রূপেশ দাস জানান, প্রথম বছর আপেল গাছের পরিচর্যা খুব জরুরি, বিশেষ করে শিকড়ের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। আপেল গাছের শিকড় মিষ্টি হওয়ায় উইপোকার আক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে হিমাচলের এক আপেল চাষির পরামর্শে নিউটেশন ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ভালো ফল পেয়েছেন। গাছের পরিচর্যায় জলের উপর বিশেষ নজর রাখতে হয় বলেও জানান তিনি।

উষ্ণ-ক্রান্তীয় জলবায়ুতে আপেল চাষ সম্ভব নয় – এই প্রচলিত ধারণা ভেঙে দিয়েছেন রূপেশ দাস। চার বছর বয়সী তাঁর গাছগুলির উচ্চতা বর্তমানে ১০ ফুট ছাড়িয়েছে এবং এক বছর পর থেকেই ফল আসা শুরু হয়। গত বছর ফুল আসার সময় থেকেই তিনি পরিচর্যায় মনোনিবেশ করেছিলেন এবং এবার নিউট্রেশন ম্যানেজমেন্ট ও পিআরজি স্প্রে করার ফলে অভাবনীয় ফলন পেয়েছেন। রূপেশবাবুকে বাগান পরিচর্যায় সাহায্য করেন তাঁর স্ত্রী রাজশ্রী প্রামাণিক। তিনি বলেন, কাশ্মীর ও হিমাচলের আপেল গাছ দেখার স্বপ্ন তাঁদের বাড়ির বাগানেই পূরণ হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে জেলা উদ্যানপালন দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর প্রিয়াঞ্জন সানিগ্রাহী জানান, আপেল চাষে সঠিক পরিচর্যা প্রয়োজন। পরিচর্যা ঠিকঠাক হলে উষ্ণ-ক্রান্তীয় জলবায়ুতেও আপেল ফলানো সম্ভব, তবে স্বাদে সামান্য পার্থক্য হতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে রাজ্য সরকার সমতলে আপেল চাষের একটি উদ্যোগ নিয়েছিল, যেখানে সাগরদিঘি ব্লকে ১.৫ একর জমিতে ১২০০টি আপেল চারা লাগানো হয়েছিল। তবে পরিচর্যার অভাবে সেই প্রকল্প সফল হয়নি।

অন্যদিকে, রূপেশ দাসের বাগানে এবার গাছ প্রতি ১৫ থেকে ২০ কেজি আপেল ফলেছে এবং গত বছরের তুলনায় ফলন অনেক ভালো। আপেল গাছের পরিচর্যায় নিয়মিত জলসেচ এবং গাছের গোড়ায় জল না জমতে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি। আপেল চাষে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্য রূপেশ দাসের এই সাফল্য একটি নতুন দিশা দেখাতে পারে।

আপেল ছাড়াও রূপেশবাবুর শখের বাগানে পিচ, পার্সিমান (জাপানের জাতীয় ফল) ও এপ্রিকট ফলও রয়েছে। এমনকি তিনি তাঁর বাগানে জাফরানও ফলিয়েছেন।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy