“উনি তো ডাক্তার না..”- লাবণী ভৌমিক, MBBS! বোর্ড লাগিয়েই চলছিল রোগী দেখা, জেনেনিন কোথায়?

কালনা মহকুমা হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন লাবণী ভৌমিক। সাইনবোর্ডে জ্বলজ্বল করত তাঁর নাম, আর সেই নাম দেখেই চোখের সমস্যা নিয়ে ভিড় জমাতেন রোগীরা। কিন্তু চিকিৎসার নামে চশমা বিক্রি করলেও রোগীদের চোখের সমস্যা দূর হয়নি। সন্দেহ হওয়ায় খোঁজখবর করতেই ধরা পড়েছে চাঞ্চল্যকর এই প্রতারণার কাহিনি। আসলে লাবণী ভৌমিক নামে কালনা হাসপাতালে কোনো চিকিৎসকই নেই!

কীভাবে শুরু হয়েছিল এই প্রতারণা?
কালনা এক নম্বর ব্লকের বাঘনাপাড়া এলাকায় একটি ওষুধের দোকানে এই প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। লাবণী ভৌমিক নামে একজন সেখানে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে চেম্বার খুলেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার দু’দিন তিনি রোগী দেখতেন। তাঁর নামের পাশে লেখা থাকত ‘কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক’। এই পরিচয় দেখেই রোগীরা ভরসা করে তাঁর কাছে যেতেন।

অভিযোগ ও স্বীকারোক্তি
রোগীদের অভিযোগ, লাবণী ভৌমিক চোখ পরীক্ষা করে চশমা বিক্রি করতেন, কিন্তু চোখের সমস্যার সমাধান হতো না। সন্দেহ হওয়ায় খোঁজ নেওয়া হলে জানা যায়, কালনা হাসপাতালে লাবণী ভৌমিক নামে কোনো চিকিৎসকই নেই।

ওষুধের দোকানের মালিক সংবাদমাধ্যমের সামনে স্বীকার করেছেন, লাবণী ভৌমিক আসলে চিকিৎসক নন। তিনি বলেন, “আমি জানতাম না যে তিনি চিকিৎসক নন। তিনি যা বলেছিলেন, আমি তাই লিখে রেখেছিলাম। এটা আমার ভুল হয়েছে।”

কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্তের বক্তব্য
কালনা মহকুমা হাসপাতালের সহকারি সুপার গৌতম বিশ্বাস জানান, “এই নামে হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক নেই।”

অন্যদিকে, অভিযুক্ত লাবণী ভৌমিক ফোনে সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমি চিকিৎসক নই, আমি একজন অপটোমেট্রিস্ট। আমি জানি না কে কোথায় আমার নাম ব্যবহার করেছে। এতে আমার কোনো দায় নেই।”

রোগীদের প্রতিক্রিয়া
একজন রোগী দেবব্রত মোদক বলেন, “ওখানে বোর্ডে লেখা ছিল কালনা হাসপাতালের চিকিৎসক। চোখ দেখে চশমা দিয়েছিলেন। কোনো ওষুধ দেননি, শুধু চশমা বিক্রি করেছেন।”

কী বলছে আইন?
এই ধরনের প্রতারণা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। চিকিৎসক সেজে প্রতারণার অভিযোগে লাবণী ভৌমিক এবং ওষুধের দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

সতর্কতা
এই ঘটনা সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছে। চিকিৎসকের পরিচয় যাচাই না করে চিকিৎসা নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, চিকিৎসকের পরিচয় ও লাইসেন্স যাচাই করে তবেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

এই ঘটনায় কালনা এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে এই ধরনের প্রতারণা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy