উচ্চ মাধ্যমিকের বইয়ে QR কোড! কেন দেওয়া হলো এই কোড? কড়া পদক্ষেপ শিক্ষা সংসদের

উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনার পর এবার বই বিতরণেও অভিনব পদক্ষেপ নিল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE)। সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর পর এবার সরকারি বইয়ের বেআইনি বিক্রি বন্ধ করতে কিউআর কোড (QR Code) ব্যবহার শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের এই বড় পদক্ষেপ শিক্ষামহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কেন এই কিউআর কোড?

জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের পর রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে সরকারি পাঠ্যপুস্তক পৌঁছানোর পরই এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। এর আগে পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ডাউনলোড করা পিডিএফ থেকে পড়াশোনা করছিল। বিগত বছরগুলিতে দেখা গেছে, সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণ করলেও, বইয়ের দোকানগুলিতে এই একই বই সামান্য পরিবর্তন করে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছিল। এর ফলে বহু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন এবং আসল-নকল নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছিল।

এই জালিয়াতি রুখতেই সরকারের দেওয়া বইয়ে কিউআর কোডের ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। সংসদ জানিয়েছে, এই কোড স্ক্যান করলেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের লোগো এবং বই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দেখা যাবে, যা আসল ও নকল বইয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করবে।

সংসদ সভাপতির বক্তব্য:

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এই পদক্ষেপকে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “বহু সময় দেখা যায়, সরকারের তরফ থেকে বিনামূল্যে দেওয়া বইগুলি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। জাল বই আটকাতেই কিউআর কোডের ব্যবহার করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, এই কিউআর কোডে উন্নত মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে এটি নকল করা প্রায় অসম্ভব।

সংসদের সচিব প্রিয়দর্শিনী মল্লিকও একই সুরে কথা বলেছেন। তিনি জানান, “সরকারি বই জাল করা হচ্ছে বলে বেশ কিছু জেলা থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। সেই জন্য আমরা এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।”

প্রশ্নের মুখে সংসদের ভূমিকা:

তবে, এই উদ্যোগের পাশাপাশি শিক্ষক মহলের একাংশ সংসদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, “উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে কাউন্সিলের বই নকল করে কোনো একটা মহল বিক্রি করছে। সেটা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন?” তাঁর মতে, শুধুমাত্র কিউআর কোড লাগালেই হবে না, যারা এই বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বইয়ের বেআইনি বিক্রির অভিযোগের পর সংসদের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সাধুবাদযোগ্য। এখন দেখার, কিউআর কোড ব্যবহারের এই নতুন পদ্ধতি কতটা কার্যকর হয় এবং বাজারে জাল বইয়ের রমরমা কতটা কমে। একই সাথে, যারা এই জালিয়াতির চক্র চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিনা, সেটাই এখন শিক্ষামহলের মূল জিজ্ঞাসা।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy