ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করলে বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব কী হবে? জেনেনিন কি বলছে বিশেষজ্ঞরা?

ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলমান হামলা-পাল্টা হামলার জেরে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি চরম উত্তপ্ত। শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালানোর পর তেহরানও তীব্র শক্তি নিয়ে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইরান এবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, তারা গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে। এই হুমকি বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ এই প্রণালী বন্ধ হলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে যে, ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিলে এর বৈশ্বিক প্রভাব কী হবে।

তেলের বাজারে বিপর্যয়ের আশঙ্কা:
হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক এড হির্স আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাবে। তার মতে, “এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৮ থেকে ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয়। অর্থাৎ বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে যায়।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইআরআইএনএন জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। দেশটির সংসদের নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য এসমাইল কসারি এই মন্তব্য করেছেন।

হির্স আরও ব্যাখ্যা করেন, “এই অঞ্চলের জন্য কোনো সহজ বিকল্প রুট নেই— বিশেষ করে সৌদি আরব, কুয়েত ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য।” তিনি সতর্ক করেন, যদি হরমুজ প্রণালী দিয়ে তেল পরিবহন অর্ধেকে নেমে আসে, তাহলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব বিশ্বজুড়ে সব দেশের ওপরই দ্রুত পড়বে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়া:
এড হির্স মনে করেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইরানে সরাসরি সামরিক হামলার একটি অজুহাত হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে। তিনি বলেন, “তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে তা হবে সরাসরি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর আক্রমণ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ওপরও। এমন পরিস্থিতি হলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।”

হরমুজ প্রণালীর গুরুত্ব:
প্রসঙ্গত, হরমুজ প্রণালী হলো পারস্য উপসাগরে প্রবেশের একমাত্র সমুদ্রপথ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ)-এর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের মোট তেল চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। এটি ইরান ও ওমানের মাঝখানে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ পানিপথ, যার মাধ্যমে উপসাগরীয় দেশগুলোর অধিকাংশ তেল রপ্তানি হয়। এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তেল রপ্তানির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ইরান এই প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের এই চরম মুহূর্তে হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়বে, তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy