ইরানের ২ পরমাণু কেন্দ্রের কোমর ভাঙতে পারেনি আমেরিকা, চাঞ্চল্যকর দাবি গোয়েন্দা রিপোর্টে

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে চালানো হামলার কার্যকারিতা নিয়ে এক বিস্ফোরক গোয়েন্দা রিপোর্ট সামনে এসেছে। ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ সূত্রে প্রাপ্ত এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ট্রাম্পের নির্দেশেই পরিচালিত হলেও আমেরিকার হামলায় ইরানের তিনটি পরমাণু আস্তানার মধ্যে দুটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা যায়নি, যা তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনের দাবির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা ‘ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’ (DIA)-এর ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানের দুই প্রধান পরমাণু কেন্দ্র – ফোরডো এবং নাটানজ – পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয়নি। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত ‘সেন্ট্রিফিউজ’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলি ইরান মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ফের চালু করতে সক্ষম। এমনকি, এই হামলার আগেই ইরান প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছিল বলেও ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যা হামলার উদ্দেশ্যকে আংশিকভাবে ব্যর্থ করে দেয়। এর অর্থ, মার্কিন হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাসের জন্য বিলম্বিত করতে পেরেছে, সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত করতে পারেনি।

যদিও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে দাবি করেছিলেন, আমেরিকা ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্র – ফোরডো, নাটানজ এবং ইসফাহান – সম্পূর্ণরূপে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর মতে, এটি ছিল ‘ইতিহাসের অন্যতম সফল সামরিক অভিযান’। এই সামরিক সাফল্যকে অসম্মান করার জন্য তিনি ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ এবং ‘সিএনএন’-এর তীব্র সমালোচনা করে সেগুলিকে ‘ফেক নিউজ’ বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, এই হামলার আগে থেকেই ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছিল, যেখানে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে বহু প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এই উত্তেজনার মধ্যেই আমেরিকার এই হামলা পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তোলে। আমেরিকার এই পদক্ষেপের প্রত্যাঘাতে ইরান কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ট্রাম্প অবশ্য তেহরানের এই হামলাকে ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এই ঘটনার পরপরই ট্রাম্প ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করেন, যদিও তারপরও দুই দেশের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা অব্যাহত ছিল।

গোয়েন্দা রিপোর্টে প্রকাশিত এই তথ্য ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের ইরান নীতি এবং তার সামরিক পদক্ষেপের প্রকৃত প্রভাব সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘তথ্যের যুদ্ধ’ এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও পুনরায় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy