
দীর্ঘ ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সাময়িক স্বস্তি সত্ত্বেও পরিস্থিতি রয়ে গেছে জটিল। সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে—যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে স্বয়ং ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমই। বুধবার (২৫ জুন) আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
নেতানিয়াহু সম্প্রতি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেছেন যে, ইরানের বিরুদ্ধে “সম্পূর্ণ বিজয়” অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁর দাবি অনুযায়ী, ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুত রাখা ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদও পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
দাবির বিপরীতে ইসরায়েলি গণমাধ্যম:
তবে নেতানিয়াহুর এই জোরালো দাবির বিপরীতে ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তারা জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলা চালিয়ে কিছুটা ক্ষতিসাধন করা সম্ভব হলেও, সেগুলোকে ‘পুরোপুরি ধ্বংস’ করা যায়নি। অর্থাৎ, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনও সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর করা যায়নি বলে বিভিন্ন সূত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা নেতানিয়াহুর ‘সম্পূর্ণ বিজয়’-এর দাবিতে জল ঢেলে দিয়েছে।
গাজায় ফিরছে ইসরায়েলের দৃষ্টি, মানবিক সংকট গভীর:
ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ আপাতত বন্ধ হলেও, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, তাদের ফোকাস এখন পুনরায় গাজার দিকে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর অর্থ হলো ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকছে, যা এই অঞ্চলের মানবিক সংকটকে আরও গভীর করবে।
ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘর্ষ চলাকালে গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ৮৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই মর্মান্তিক মৃত্যুর সংখ্যা কেবল সংঘাতের তীব্রতাই নয়, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় চলছে, তার ভয়াবহতাকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানকে সরাসরি আঘাত করার মধ্য দিয়ে ইসরায়েল সাময়িক কৌশলগত সুবিধা অর্জন করলেও, পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। সর্বোপরি, গাজায় চলমান সহিংসতা এবং রক্তপাত এই অঞ্চলে একটি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়েই থাকছে। যুদ্ধবিরতি সাময়িক স্বস্তি আনলেও, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের পথ এখনও বহু দূর।