ইরানের পর পর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ভয়-আতঙ্কে প্রহর গুনছে ইসরায়েলি বাসিন্দারা

আয়রন ডোম ভেদ করে তেল আবিবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সদর দফতরে সরাসরি আঘাত, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
তেল আবিব, ১৫ই জুন, ২০২৫: মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত এক নতুন ও উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। ইসরায়েলের শক্তিশালী ‘আয়রন ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি তেল আবিবের ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সদর দফতরে (কিরিয়া) আঘাত হেনেছে। এই ঘটনা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে এবং দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। ইরানের এই অপ্রত্যাশিত সাফল্যকে তাদের পাল্টা হামলার একটি চাঞ্চল্যকর দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলের বিমান হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটে। দ্য টাইমসের যাচাইকৃত একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তেল আবিবের কেন্দ্রীয় অংশে একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে। ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ইসরায়েলের আয়রন ডোম একটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করে দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে সরাসরি প্রতিরক্ষা সদর দফতরে আঘাত হানে। ভিডিওর শুরুতে বিকট শব্দ এবং বের হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের দৃশ্য দেখা যায়, এরপর একটি উজ্জ্বল আলো ও আগুনের গোলা একটি ভবনে বিস্ফোরিত হয়। এর ঠিক পেছনে তেল আবিবের কিরিয়া এলাকার মার্গানিট টাওয়ারটি দেখা যায়, যা আইডিএফ সদর দফতরের কাছে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।

ইরানের হামলার সময় ইসরায়েলের বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং অনেকেই ঘটনার আকস্মিকতায় হতবাক হয়ে যান।

তেল আবিবের বাসিন্দা টালি হোরেশ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজকে জানান, “আমরা ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটল। এতে পুরো ভবন কেঁপে ওঠে।” তিনি আরও জানান, উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছানোর আগপর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা তারা সেখানে আটকা পড়েছিলেন।

ইরানের এই হামলায় ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) মাইকেল ডেভিড এই হামলার মাত্রা সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, “এটা এত বড় মাত্রার হামলার ঘটনা, যা আমরা অতীতে দেখিনি।”

এর আগে শনিবার রাতে তেল আবিবের কাছাকাছি অবস্থিত রিশনের আবাসিক এলাকায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুজন নিহত এবং অন্তত ২০ জন আহত হন। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে তিন মাস বয়সী এক শিশুও রয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা অভি গাতেনিও চ্যানেল ১২-কে বলেছেন, “আমি বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। সাইরেন বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিচে নেমে নিরাপদ কক্ষে চলে যাই। এর পাঁচ মিনিট পর আমরা বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শুনি।” তিনি আরও জানান, “পুরো এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে গেছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমাদের কিছু হয়নি। আমাদের একটি আঁচড়ও লাগেনি।”

শুক্রবার সকালে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে ইরানের বেশ কয়েকজন সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। এরপর থেকেই ইসরায়েলে প্রতিশোধ নিতে শুরু করে তেহরান, যার সর্বশেষ সংযোজন তেল আবিবের এই সরাসরি আঘাত।

আয়রন ডোম ভেদ করে ইরানের এই সফল হামলা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতকে আরও এক গুরুতর দিকে ঠেলে দিল। এর ফলে আঞ্চলিক উত্তেজনা কোথায় গিয়ে থামবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy