“ইউনূসের কোনো ভরসা নেই..!”-বাংলাদেশ ঘেষা এই রাজ্য বাড়ানো হলো কড়া প্রহরা, বাড়লো নিরাপত্তা

ত্রিপুরার রাজ্য নিরাপত্তা আরও জোরদার করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (TSR)-এর জন্য আরও একটি নতুন ব্যাটেলিয়ন গঠনের অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় সরকার। এটি ইন্ডিয়া রিজার্ভ (IR) ব্যাটেলিয়ন হবে। সম্প্রতি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গ্রহণ করেছে।

শুক্রবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা টিএসআর-এর আরও একটি ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এই প্রস্তাবটি কেন্দ্রের অনুমোদন পেয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের পর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘ত্রিপুরার জন্য উৎসাহের খবর! কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের জন্য আরও একটি ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। এতে রাজ্যের নিরাপত্তা তো বাড়বেই কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে।’

বর্তমানে টিএসআর-এর মোট ১৪টি ব্যাটেলিয়ন রয়েছে, যার বেশিরভাগই ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন। ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নগুলির বিশেষত্ব হলো, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রয়োজন অনুযায়ী এগুলিকে দেশের যে কোনও রাজ্যে মোতায়েন করতে পারে। ত্রিপুরার জন্য আরও একটি আইআর ব্যাটেলিয়ন গঠনের নির্দিষ্ট কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

তবে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, এর প্রধান কারণ হলো ত্রিপুরার দীর্ঘ ও স্পর্শকাতর বাংলাদেশ সীমান্ত। ত্রিপুরার ৮৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের প্রায় ৮৬ শতাংশই বাংলাদেশের সীমানা। এই সীমান্তের অনেক জায়গাতেই এখনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের আমলে সেখানে ক্রমে মৌলবাদী ও জঙ্গিদের দাপট বৃদ্ধির খবর উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক ভারত-পাক সংঘাতের সময়ও বাংলাদেশ থেকে ভারত-বিরোধী কিছু মন্তব্য শোনা গিয়েছিল, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান সহ সীমান্ত এলাকায় যাবতীয় অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধে আইআর ব্যাটালিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সীমান্ত প্রহরার প্রথম সারিতে বিএসএফ থাকলেও, টিএসআর হলো দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা সারি। ইদানিং বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় অবৈধ অনুপ্রবেশের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। মাত্র দু’দিন আগেই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী নিজে জানিয়েছিলেন যে, গত বছরের তুলনায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধিই নতুন ব্যাটেলিয়ন গঠনের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

টিএসআর ব্যাটেলিয়নগুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে থাকে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সাল থেকে দিল্লি পুলিশের আওতায় একটি এবং ২০২২ সাল থেকে ছত্তিসগড়ের সাউথ ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেডে একটি টিএসআর ব্যাটেলিয়ন মোতায়েন রয়েছে। ত্রিপুরায় ওএনজিসি-র সাইটগুলিতেও নিরাপত্তা দেয় আরও একটি টিএসআর ব্যাটেলিয়ন। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী (CAPF)-এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা দেওয়ার ভারও বর্তায় টিএসআর-এর উপর।

সব মিলিয়ে, বাংলাদেশ সীমান্তের পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং রাজ্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার টিএসআর-এর আরও একটি ব্যাটেলিয়ন গঠনের অনুমোদন দিয়েছে, যা ত্রিপুরার নিরাপত্তা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy