
আহমেদাবাদের মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না হওয়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি এই ঘটনায় কেন্দ্র সরকারের ভূমিকায় একাধিক প্রশ্ন তোলেন, বিশেষ করে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন।
মমতার উদ্বেগ: ‘মানুষের জীবনের কি কোনো দাম নেই?’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মানুষের জীবন সঙ্কটে। প্রতিদিন বিমানে উঠছেন সকলে, কিন্তু নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমদাবাদে কত মানুষ মারা গেলেন, কেউ জানে না। ডাক্তাররা হস্টেলে ছিলেন, তাঁদের প্রাণ চলে গিয়েছে। কত মানুষ নানা কাজে ওখানে যেতেন। কাছাকাছি ছিলেন কত জন। আজও সংখ্যা জানা গেল না।” মানুষের জীবনের প্রতি কেন্দ্র সরকারের উদাসীনতা নিয়ে তাঁর ক্ষোভ স্পষ্ট ছিল।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ
বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও মমতা তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, “আমদাবা-লন্ডনের বিমানে যে দুর্ঘটনা হয়েছে, কাদের দিয়ে তদন্ত করাচ্ছেন? আমলাদের দিয়ে।” নিজের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করিয়ে মমতা বলেন, “আমি যতদূর জানি, আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, সেফটি রিভিউ কমিটি থাকত একটা। সিভিল এভিয়েশনের ক্ষেত্রেও আছে। আজ পর্যন্ত একটা এফআইআর হল না! মানে, মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই! একবারও ভেবেছেন!” তাঁর এই মন্তব্য তদন্তের নিরপেক্ষতা এবং দ্রুততা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে।
আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট
গত ১২ জুন আমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর ছাড়ার কয়েক সেকেন্ড পরই এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীভর্তি বিমান ভেঙে পড়ে। বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে মাত্র একজন জীবিত ফিরে এসেছেন। তবে, বিমানটি যে এলাকায় ভেঙে পড়েছিল, সেখানে এমবিবিএস পড়ুয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সহ অসংখ্য প্রাণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দু’দিন আগে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৭০ জনের বেশি মারা গিয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে, কিন্তু হতাহতের সঠিক সংখ্যা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি। অনেক পরিবার এখনও প্রিয়জনের মৃতদেহ হাতে পাননি।
গুজরাট সরকারের পরিসংখ্যান ও মমতার অসন্তোষ
বৃহস্পতিবার গুজরাতের মন্ত্রী ঋষিকেশ পটেল সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, এখনও পর্যন্ত ১৬৯টি দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টের সঙ্গে ডিএনএ মিলিয়ে দেহ শনাক্তকরণের কাজ চলছে। এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে এবং পরিবারের লোকজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তদন্তে স্বচ্ছতা এবং হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। এই দুর্ঘটনাকে ঘিরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মমতার এই আক্রমণ রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে।