আলিপুরে জনসভার পর রাজ্য রাজনীতিতে উত্তাপ, ‘মমতা কালীঘাটের নালা’, বার্তা শুভেন্দুর

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আলিপুরদুয়ার জনসভার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ উত্তাপ বাড়ছে। ২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মোদীর হাইভোল্টেজ জনসভায় জনজোয়ার লক্ষ্য করা যায়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী একাধিক ইস্যুতে মমতা সরকারকে জোরালো আক্রমণ করলেও, কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। তবে এর পাল্টা দিতে গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যা নিয়ে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ময়দানে বিতর্ক তুঙ্গে।

‘অপারেশন সিঁদুর’ মন্তব্যের জেরে মমতা-মোদীর বাগযুদ্ধ
‘অপারেশন সিঁদুর’ ইস্যুতে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রত্যেক মহিলার সম্মান আছে। স্বামীর থেকে সিঁদুর গ্রহণ করেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী এমনভাবে কথা বলছেন…আপনি সকলের স্বামী নন! সবার আগে নিজের স্ত্রীকে কেন সিঁদুর দিচ্ছেন না?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে।

এছাড়াও, মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে, “সব রাজনৈতিক দল, বিজেপি বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিরা যখন বিদেশে দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, সেই সময় নির্বাচনের রাজনীতি করছেন মোদি।” তাঁর এই মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

শুভেন্দু অধিকারীর তীব্র প্রতিক্রিয়া: ‘অসামাজিক’ ও ‘কালীঘাটের নালা’ আখ্যা
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মমতার এই ব্যক্তিগত আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মমতা প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, “উনি পুরোপুরি অসামাজিক। উনি মহিলাদের অপমান করছেন। কারণ উনি তো সিঁদুর মুছতে ভালোবাসেন। হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাসের সিঁদুর তো উনিই মুছেছেন।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে শুভেন্দু অধিকারী মমতাকে নারী বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেন।

তিনি আরও বলেন, “মোদিজীর সঙ্গে ওনাকে লড়তে হবে না। ওনাকে তো আমিই লড়ে হারিয়ে দিয়েছি। আবার ২৬ এ হারাবো। উনি কার সঙ্গে কার তুলনা করছেন। মোদিজীর সঙ্গে কী লড়বেন, উনি মহাসমুদ্র, গঙ্গা। আর উনি তো কালীঘাটের নালা। কার সঙ্গে কার তুলনা।” এই ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমে শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেন।

‘লজ্জা’ বলে তোপ সুকান্তর, দীপক ঘোষের বইয়ের হুঁশিয়ারি
প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, “উনি এই লেভেলে আক্রমণ করলে দীপক ঘোষের বইতে চাপিয়ে বের হবে। আমি ওনাকে সাবধান করছি।” ‘এর উত্তর বাংলার মানুষ দেবেন’ বলেও হুঙ্কার করেন শুভেন্দু। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘লজ্জা’ বলে তোপ দাগেন এবং একে তাঁর ‘কুশিক্ষার পরিচয়’ বলে অভিহিত করেন।

‘কালই নির্বাচন করুন’ মমতার আহ্বান, পাল্টা শুভেন্দুর ‘রাষ্ট্রপতি শাসন’ হুঁশিয়ারি
এদিন সাংবাদিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “পারলে কালকেই নির্বাচন করুন।” এই চ্যালেঞ্জের জবাবে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “রাষ্ট্রপতি শাসনে নির্বাচন হলে উনি ২০০ সিটে হারবেন। উনি থার্ড হবেন। অন্যরা দ্বিতীয় হবে।”

ভবানীপুরে মমতাকে হারানোর হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর
বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী আরও বলেন, “আগামী বছর এই সময় উনি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না। ২৬ সালে ওনাকে বাংলার মানুষ প্রাক্তন করে দেবেন।” এবার ভবানীপুরে মমতাকে হারানোর চওড়া হুঁশিয়ারিও দেন শুভেন্দু, যা রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy