
রসালো আমের স্বাদে মুগ্ধ বাঙালি থেকে দেশবাসী, কিন্তু এই বছর আমের দামের ব্যাপক পতন উৎপাদনকারী কৃষকদের কপালে ফেলেছে চিন্তার ভাঁজ। পরপর তিন দফায় দাম কমার পর বর্তমানে অনেক জায়গায় আমের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিশেষত উত্তরপ্রদেশে, যেখানে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমের ফলন হয়, সেখানে দাম কমেছে অনেকটাই।
কেন এই দরপতন?
এই বছর আমের ব্যাপক ফলনই দাম কমার অন্যতম প্রধান কারণ। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের থেকে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এই বছর আমের উৎপাদন অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ম্যাঙ্গো গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট এস ইনস্রাম আলি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত বছর উত্তরপ্রদেশে আমের ফলন ছিল ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন, যা এই বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন। তার মতে, এই বছর ১০০ শতাংশ আমগাছেই মুকুল থেকে ফল হয়েছে, যা উৎপাদনের দিক থেকে আগে থেকেই ভালো ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
তবে শুধুমাত্র ফলন বৃদ্ধিই নয়, দাম কমার পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল আগাম বর্ষার পূর্বাভাস। ভারতের আবহাওয়া দফতর (IMD) জানিয়েছিল যে গত বছরের তুলনায় এই বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হবে। এই পূর্বাভাস পেয়ে চাষিরা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে আগে থেকেই বাগানের সমস্ত ফল তুলে নিয়েছেন, যার ফলে বাজারে হঠাৎ করে আমের সরবরাহ বেড়ে গেছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিত্র:
উত্তরপ্রদেশে জনপ্রিয় দশেরা আমের দাম গত বছর প্রতি কেজি ৬০ টাকা থাকলেও, এই বছর তা কমে ৪০-৪৫ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। শুধু উত্তরপ্রদেশেই নয়, দেশের অন্যান্য আম উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতেও একই চিত্র।
দক্ষিণ ভারতে, অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি এবং চিত্তুর জেলায় উৎপাদিত তোতাপুরি আমের দামও প্রবলভাবে কমেছে। সেখানকার আম পাল্প প্রস্তুতকারকরা এখনও কৃষকদের কাছ থেকে আম কেনা শুরু করেননি। এর কারণ হিসেবে তিরুপতির এক আম ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত বছরের আমের স্টক এখনও রয়ে যাওয়ায় কারখানাগুলি নতুন করে আম কিনছে না। এই অঞ্চলের কৃষকরাও বর্ষার আঁচ পেয়ে আগে থেকে সমস্ত আম তুলে নিয়েছেন।
আম উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও উচ্চমানের আমের দাম ৮০ টাকা থেকে কমে ৪৫-৫০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট:
২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী আমের উৎপাদন ২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনে পৌঁছেছিল, যার নেতৃত্ব দিয়েছিল ভারত। বিশ্বের মোট আম সরবরাহের অর্ধেকই এসেছিল ভারত থেকে। ভারতের পর এই তালিকায় ছিল চিন ও ইন্দোনেশিয়া, যেখান থেকে যথাক্রমে ৩.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন ও ৩.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন আমের সরবরাহ করা হয়েছিল। ভারতের সামগ্রিক আম উৎপাদনের ২০ শতাংশ আসে উত্তরপ্রদেশ থেকে।
সব মিলিয়ে, রেকর্ড ফলন এবং আগাম বর্ষার পূর্বাভাসের জেরে আমের দাম আপাতত কমই থাকবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা আমপ্রেমীদের জন্য সুখবর হলেও, চাষিদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।